আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। টিএফআই-জেআইসি সেলে গুম-খুন ও জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়। বুধবার সকালে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানি শেষে তিনি জানান, তিনটি মামলার মোট ১৫ আসামিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করেছে। এর মধ্যে টিএফআই সেলে গুম-নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ১৭ আসামির ১০ জনকে হাজির করা হয়। তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য সাত দিনের মধ্যে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়।
আরেক মামলায় জেআইসি সেলে গুমের অভিযোগে ১৩ আসামির মধ্যে তিনজনকে হাজির করা হয়। তাদের বিরুদ্ধেও একই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল এবং ২০ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় হাজির হওয়া দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়ে আগামী ৫ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
এর আগে ৮ অক্টোবর তিন মামলায় মোট ৩৪ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল-১। এর মধ্যে দুটি মামলায় শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ২৫ জন সেনা কর্মকর্তা। সেনাসদর জানিয়েছে, অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর ১১ অক্টোবর ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তার সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অব.), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, মেজর মো. রাফাত বিন আলম, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
ট্রাইব্যুনালে সেনা কর্মকর্তাদের হাজির ঘিরে সকাল থেকেই রাজধানীর কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের তৎপর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
সিএ/এমআর