ঢাকা–বগুড়া মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ভূঁইয়াগাঁতী বাসস্ট্যান্ড এলাকা এক কিলোমিটার অংশে পরিণত হয়েছে ভয়ংকর মরণফাঁদে। গত ছয় মাসে এই স্বল্প দূরত্বেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অন্তত ১১ জনের। আহত হয়েছেন ৪০ জনের বেশি। সংশ্লিষ্টদের মতে, সড়ক বিভাজন (রোড ডিভাইডার) না থাকা এবং পার্শ্বরাস্তা বন্ধ করে দেওয়াই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
স্থানীয়দের ভাষ্য, ভূঁইয়াগাঁতী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান চলাচল এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সড়ক বিভাজন না থাকায় বিপরীত দিকের যানবাহন মুখোমুখি হয়ে পড়ে। পাশাপাশি পার্শ্বরাস্তা বন্ধ থাকায় দক্ষিণ দিক থেকে আসা গাড়িগুলোকে হঠাৎ করে মূল সড়কের মাঝখানেই ঘুরতে হয়। এতে প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। কখনো সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হলেও অনেক সময় তা প্রাণঘাতী রূপ নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই এলাকায় অন্তত সাতটি বড় দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে কলেজছাত্র, মোটরসাইকেল আরোহী, ইজিবাইকচালক, ভ্যানচালক, পল্লিচিকিৎসক, রাজনৈতিক নেতা এবং পথচারী রয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন, যাদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। ভূঁইয়াগাঁতী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে পার্শ্বরাস্তা বন্ধ হওয়ার পর থেকেই দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সকাল ও বিকেলে যানজট এবং বিপরীতমুখী গাড়ির সংঘর্ষে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সোনাখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের এক ইউপি সদস্যের ছেলে আব্দুল মতিন সরকার বলেন, ‘আমার বাবা সকালে জরুরি কাজে যাচ্ছিলেন। একটি ট্রাক তাকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলল। যদি ডিভাইডার এবং পার্শ্বরাস্তা থাকত— হয়তো আমার বাবা আজও বেঁচে থাকতেন।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা আর কোনো মা-বাবাকে এমনভাবে হারাতে চাই না।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এ এলাকায় এখন গাড়িতে চলাচল করতে ভয় লাগে। কখন কে ধাক্কা খাবে বলা যায় না। রোড ডিভাইডার না থাকা মানে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করা।’ আরেক স্থানীয় বাসিন্দা শংকর কুমার দাস বলেন, ‘আমরা বারবার প্রশাসনের কাছে রোড ডিভাইডার স্থাপন ও পার্শ্বরাস্তা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে প্রায়ই রক্তে ভিজে যাচ্ছে এ রাস্তা। দ্রুত রোড ডিভাইডার নির্মাণ ও পার্শ্বরাস্তা চালু করা জরুরি।’
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, ভূঁইয়াগাঁতী এলাকাকে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক টহলও বাড়ানো হয়েছে।
মহাসড়কটি দ্বিতীয় সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতাভুক্ত। এ প্রকল্পের উপপ্রকল্প ব্যবস্থাপক সরফরাজ হোসাইন বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ওই স্থানে স্থায়ী রোড ডিভাইডার স্থাপন ও বন্ধ পার্শ্বরাস্তা চালু করার পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন। তবে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জায়গা ছেড়ে দিলেই কাজ শুরু করা যাবে।’
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল খালেক পাটোয়ারী বলেন, ভূঁইয়াগাঁতী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে পার্শ্বরাস্তার সমস্যা সমাধানে নতুন করে জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। এ জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সওজ বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত সমাধানের আশাও ব্যক্ত করেন তিনি।
সিএ/জেএইচ


