জোটের স্বার্থে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি সংসদীয় আসন ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। এসব আসনে গণ অধিকার পরিষদ ও জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষ দুই নেতাকে জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এতে মনোনয়ন বঞ্চিত হন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাসহ বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী।
মনোনয়ন না পেলেও হেভিওয়েট নেতারা নির্বাচনের মাঠ ছাড়ছেন না। তারা স্বতন্ত্রভাবে ভোটে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ভোটে লড়তে অনড়। দলের একটি অংশের নেতাকর্মীর সমর্থন থাকায় তরুণ দে ভোটের মাঠে থাকতে পারেন। এছাড়া আরেকটি আসনেও একজন বিএনপি নেতা নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
তবে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ সংসদীয় আসনের চার নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম।
রুহুল কবির রিজভীর সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়ে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব তরুণ দে এবং বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মেহেদী হাসান পলাশকে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ ও বিজয়নগরের একাংশ) আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিকে জোটের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
তবে এ সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে চারজন নেতাই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে রুমিন ফারহানা ও আব্দুল খালেক জেলা বিএনপির উপদেষ্টা, মেহেদী হাসান সহ-সভাপতি পদে ছিলেন। রুমিন ফারহানা ও তরুণ দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ থেকে এবং আব্দুল খালেক ও মেহেদী হাসান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বহিষ্কৃত চার প্রার্থীর নিজস্ব ভোট বলয় রয়েছে। নির্বাচনে তারা অংশ নিলে জোটের প্রার্থীর জন্য ভোটের ময়দান কঠিন হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে দুটি আসনে যদি আলোচনার মাধ্যমে একজন প্রার্থী থাকে, তাহলে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা পার করা তাদের জন্য তুলনামূলক সহজ হবে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সভাপতি মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, ‘নেত্রীকে চিরবিদায় দিয়ে আসলাম। এখনই নির্বাচন নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। বাঞ্ছারামপুরের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে তারা যে সিদ্ধান্ত দেয় সেটাই মেনে নেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘দল হয়ত বৃহৎ পরিসরে চিন্তা করে। দলের হাইকমান্ড ভালো বলতে পারবেন কেন তারা সেটা করেছেন। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আমাকে বহিষ্কার করা হবে, এটা প্রত্যাশিত ছিল। তবে আমি আমার দেশের মানুষের ও এলাকার মানুষের দোয়া নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আগেও সত্য বলতাম, এখনো যেন সত্য বলতে পারি সেই দোয়া চাই। আমি ভোটের মাঠে থাকছি, এটা নিশ্চিত।’
প্রসঙ্গত, রুমিন ফারহানার বাবা অলি আহাদ তৎকালীন কুমিল্লা-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন। তিনি তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাহের উদ্দিন ঠাকুরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং পরাজিত হন। অভিযোগ রয়েছে, অলি আহাদকে অন্যায়ভাবে পরাজিত করা হয়েছিল এবং ফলাফল ভোটের পরের দিন ঘোষণা করা হয়।
সিএ/এএ


