রংপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল কার্যক্রম শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে মোট ৫৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৭টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছেন ৪৭ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ৯ জন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং আট উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রার্থীরা। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জাতীয় পার্টি, বাসদ, সিপিবি, খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, নাগরিক ঐক্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও এই দিনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুরের ছয়টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মোট ৬১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। শেষ দিনে ৫৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে রংপুর-১ আসনে ৯ জন, রংপুর-২ আসনে পাঁচজন, রংপুর-৩ আসনে ১০ জন, রংপুর-৪ আসনে ১০ জন এবং রংপুর-৫ ও রংপুর-৬ আসনে ১১ জন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
মনোনয়নপত্র জমাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাচন অফিসগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায়। দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড়, স্লোগান ও মিছিলের মধ্য দিয়ে অনেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এতে পুরো রংপুরজুড়ে নির্বাচনী আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।
হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসনের জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। রংপুর সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন রংপুর-৩ (সদর ও সিটি করপোরেশন) আসনের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
এছাড়া বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনের জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এ টি এম আজহারুল ইসলাম।
মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, এনসিপি, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় পার্টির কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় মিছিল ও শোডাউন করেছেন। আচরণবিধি অনুযায়ী প্রার্থীসহ সর্বোচ্চ পাঁচজন মনোনয়ন দাখিলের সময় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ড) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ইসলামী আন্দোলনের এ টি এম গোলাম মোস্তফা বাবু, বাসদ (মার্কসবাদী) আহসানুল আরেফিন, ইসলামী ফ্রন্টের মো. আনাস, খেলাফত মজলিসের মো. মমিনুর রহমান, জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার মঞ্জুম আলী, জামায়াতের রায়হান সিরাজী, বিএনপির মোকাররম হোসেন সুজন, গণঅধিকার পরিষদের হানিফ খান সজিব ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আল মামুন।
রংপুর-২ আসনে বিএনপির মোহাম্মদ আলী সরকার, জাতীয় পার্টির আনিছুল ইসলাম মণ্ডল, জামায়াতের এ টি এম আজহারুল ইসলাম, জেএসডির মো. আজিজুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলনের মো. আশরাফ আলী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
রংপুর-৩ আসনে বাসদের আব্দুল কুদ্দুছ, ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, বিএনপির সামসুজ্জামান সামু, জাতীয় পার্টির জি এম কাদের, জামায়াতের মাহবুবুর রহমান বেলাল, স্বতন্ত্র প্রার্থী রিটা রহমান এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী মোসা. আনোয়ারা ইসলাম রানী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসান জানান, উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র দাখিল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে এবং জেলা ও উপজেলাগুলোতে সুশৃঙ্খলভাবে মনোনয়ন গ্রহণ করা হয়েছে।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বৈধ প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপর প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে শুরু হবে নির্বাচনের মূল প্রচারণা।
সিএ/এএ


