বাগেরহাটের শরণখোলায় চলতি মৌসুমে আলু চাষে আগ্রহ কমে গেছে চাষিদের মধ্যে। গত মৌসুমে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় উৎপাদন খরচও তুলতে পারেননি অনেকেই। ফলে এবার অনেকে আলুর বদলে পেঁয়াজসহ অন্যান্য বিকল্প ফসলে ঝুঁকছেন।
চাষিরা জানান, গত বছর ৫০ কেজি বীজ আলুর দাম ছিল ৩,০০০–৩,৫০০ টাকা, অর্থাৎ প্রতি কেজি ৬০–৭০ টাকা। জমি চাষ, সেচ, বীজ, সার-কীটনাশক ও শ্রমিকসহ এক বিঘায় খরচ হয় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। কিন্তু মৌসুম শেষে মাঠেই আলু বিক্রি করতে হয়েছে ৭০০–৮০০ টাকা মণ দরে, যা উৎপাদন খরচের অর্ধেকও তুলতে পারেনি।
লোকসানের ভয়ে কমছে আবাদ
গত বছর উপজেলায় ৭৮৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ হলেও এবার সেই চিত্র বদলে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ জানায়, গত মৌসুমে উচ্চ উৎপাদন ও দেশের বিভিন্ন হিমাগারে পুরনো আলুর মজুদ থাকায় বাজারে নতুন আলুর দামও পড়ে গেছে। এর প্রভাবে বীজ আলুর দাম গতবারের তুলনায় এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে, ফলে লাভের সম্ভাবনা থাকলেও আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা।
অন্যদিকে বাজারে ইতিমধ্যে নতুন আলু কম দামে পাওয়া যাচ্ছে, পুরনো আলুও বিক্রি হচ্ছে ২০–২২ টাকা কেজি দরে। শরণখোলায় এখনো আলুর আবাদ শুরু হলেও ফসল তোলার সময় বাজার নতুন আলুতে সয়লাব থাকবে বলে ধারণা করছেন চাষিরা। এতে স্থানীয় আলুর চাহিদা কমে গিয়ে মাঠ থেকেই কম দামে বিক্রি করার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
চাষিদের অভিজ্ঞতা
রাজৈর গ্রামের চাষি দুলু তালুকদার বলেন,
“গত বছর ৬ বিঘায় আলু চাষ করে উৎপাদন হয়েছিল ২,১০০ মণ। কিন্তু দাম না পাওয়ায় ৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তাই এবার ২ বিঘায় সীমিত আবাদ করছি, বাকিটায় পেঁয়াজ চাষের পরিকল্পনা নিয়েছি।”
একই গ্রামের সোহেল ফরাজী জানান,
“৫ বিঘায় আলু চাষে দেড় হাজার মণ উৎপাদন হয়েছিল। বেশি দামে বিক্রির আশায় মাঠে মজুদ রাখায় বেশিরভাগ আলু নষ্ট হয়ে যায়। প্রায় ৫ লাখ টাকা লোকসান হওয়ায় এবার আর আলু চাষ করব না।”
কৃষি বিভাগের মন্তব্য
শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন,
“গত বছর বীজের দাম ছিল বেশি, উৎপাদনও হয়েছিল প্রচুর। কিন্তু দেরিতে চাষ হওয়ায় চাষিরা সঠিক দাম পাননি। সে কারণে এবছর আগ্রহ কম। তবুও চাষিদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন স্থানে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে।”
এ বছর উপজেলায় ১১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিএ/এএ


