আজ ৮ ডিসেম্বর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন—ভাঙ্গা হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা, কৌশল ও সম্মিলিত লড়াইয়ের ফলে ভাঙ্গা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের দখলমুক্ত হয়।
ভাঙ্গার তুজারপুর ইউনিয়নের জান্দী গ্রামে অবস্থিত স্বাধীনতা স্তম্ভ এখনো সেই গৌরবময় দিনের স্মৃতি বহন করে।
পাতরাইল গ্রামে সশস্ত্র যুদ্ধ ও পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণ
‘মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুর’ গ্রন্থের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর মাদারীপুর থেকে পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল হেঁটে ভাঙ্গার আজিমনগর ইউনিয়নের পাতরাইল গ্রামে আশ্রয় নেয়। স্থানীয়রা তাদের খাবার দিলে গৃহকর্তা দ্রুত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে খবর পাঠান।
এরপর তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ঘিরে ফেলেন বাড়িটি—
সানোয়ার মোল্লার নেতৃত্বে ২৫ জন,
আব্দুল জব্বার মাতুব্বরের নেতৃত্বে ৬০ জন,
এবং আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে আরও ২০–২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা অভিযান পরিচালনা করেন।
তীব্র গোলাগুলিতে পাকিস্তানি বাহিনী দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর এই যুদ্ধে শহীদ হন। প্রায় আধাঘণ্টার সংঘর্ষ শেষে পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়।
৩৫ জন পাকিস্তানি সেনার মধ্যে—
১১ জন অক্ষত,
৯ জন আহত,
বাকিরা নিহত বা মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলেন।
যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধারা
এই অভিযানে তিনটি গ্রুপ—সানোয়ার, জব্বার ও খালেক গ্রুপের যোদ্ধারা অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
কোরণ উদ্দিন মোল্লা, বেলায়েত হোসেন, হারুন মিয়া, নুরুল হক, রেজাউল ইসলাম, মোল্লা গিয়াস উদ্দিন, এ কে এম সুলতানুল আলম, আবুল হোসেন, দুলাল চন্দ্র রায়, ইস্কান্দার আলী, বেনজির, আবুল বাশার মিয়া, আনোয়ার হোসেন, সেখ ইয়াদ আলী, বাকি মিয়া, আজিজুল হক, শাহাবুদ্দিন বাহার, সোবাহন খান, ইস্কান্দার প্রমুখ।
বন্দিদের সুরক্ষা ও পরিণতি
আত্মসমর্পণের পর বন্দি পাকিস্তানি সেনাদের কঠোর প্রহরায় রাখা হয় এবং তাদের খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। পরে, ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ফরিদপুর পুলিশ লাইনসে তাদের মিত্রবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সিএ/এএ


