জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন গ্রন্থাগার ভবনের চারতলা থেকে পড়ে গত ১ আগস্ট শ্রমিক মো. আরিফুলের মৃত্যু কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার চিত্র আরও স্পষ্ট করেছে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ধরনের দুর্ঘটনায় শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা দেখায়—শ্রমিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে।
ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ‘অগ্রগতির উদ্যাপন, ভবিষ্যৎ গড়া: শোভন কাজে অগ্রসর হতে বাংলাদেশের তিন আইএলও কনভেনশন অনুমোদন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব বিষয় তুলে ধরেন সাবেক শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “হতাশ হলে চলবে না। বাংলাদেশ এগোচ্ছে। এর প্রমাণ—আইএলওর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কনভেনশন অনুসমর্থন করা। এই অনুসমর্থন জাতির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের অঙ্গীকার; এখন সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন জরুরি।”
গত অক্টোবরে বাংলাদেশ আইএলওর ১৫৫, ১৮৭ এবং ১৯০ নম্বর কনভেনশন অনুসমর্থন করে। এর মধ্যে ১৫৫ ও ১৮৭—দুটি মৌলিক কনভেনশন।
কনভেনশন ১৫৫: পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য
কনভেনশন ১৮৭: প্রতিরোধমূলক নিরাপত্তা সংস্কৃতি গঠন
কনভেনশন ১৯০: কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধ
এই দুটি মৌলিক কনভেনশন অনুমোদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে আইএলওর ১০টি মৌলিক কনভেনশনই অনুমোদন করল।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। সভাপতিত্ব করেন শ্রমসচিব মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া।
ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, বিনিয়োগ ও বাজার সুবিধা শ্রম অধিকার সুরক্ষার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশ সঠিক দিকেই এগোচ্ছে।
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স টুনন বলেন, প্রতিটি কর্মক্ষেত্র হবে নিরাপদ, সুস্থ ও সহিংসতামুক্ত—এগুলো কোনো বিশেষ সুবিধা নয়, মানবিক মর্যাদার ন্যূনতম শর্ত। তিন কনভেনশন অনুমোদন শ্রমমান উন্নয়নের পাশাপাশি বৈশ্বিক বাণিজ্যে আস্থা বাড়াবে। তিনি আশ্বাস দেন, কনভেনশন বাস্তবায়নে আইএলও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে।
এ সময় শ্রমিকনেতা নাইমুল আহসান মালিকপক্ষের অনুপস্থিতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শ্রম খাতের সামগ্রিক উন্নয়নে খাতভিত্তিক তথ্যভান্ডার জরুরি—শুধু পোশাক খাত নয়, সব খাতেই সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম, সাবেক শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এবং শ্রমবিষয়ক পরামর্শক জেনিফা কে জব্বার।
সিএ/এএ


