ইভান পাল
আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে
প্রকৃতি সতীরে সাজিয়ে দাও।
আজি সাগরে ভুবনে আকাশে পবনে
নূতন কিরণ ছড়িয়ে দাও।।
আজি পুরানো যা কিছু দাও গো ঘুচিয়ে,
মলিন যা কিছু ফেলো গো মুছিয়ে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত এ গানটির ক’টি চরণ দিয়েই প্রবন্ধটি শুরু করলাম।
কারণ, আজ পহেলা বৈশাখ। বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব উৎসব। বাংলা নববর্ষ।
বাঙ্গালি সংস্কৃতির এক বিরাট অংশ। বাঙালিদের প্রাণের উৎসব।
তাই সেই গানের চরণগুলোকে যদি একটু ভেঙ্গেই বলি, তবে বলতে হয়—-
নূতনের আলোয় আলোকিত হোক পৃথিবী। পুরনো, মলিন যা কিছু আছে সব ধুয়ে যাক মুছে যাক।
আর যদি সবার ভাষায়ই বলি, তবে বলতে হয়—-
“অগ্নিস্নানে সুচি হোক ধরা”।।

আজ পহেলা বৈশাখ। বারোটি মাস ছয়টি ঋতু নিয়ে পালাবদল করে বাংলার প্রকৃতি পরিবারে বারবারই ঘুরেফিরে আসে।
মূলত: এ উৎসবটি নির্দিষ্ট কোন ধর্ম সম্প্রদায়ের উৎসব নয়। বরং এটি অভিন্ন বাঙ্গালিদের উৎসব, এক অসম্প্রদায়িক উৎসব। যা বাঙ্গালি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এই বাংলায় ধান কাটাকে কেন্দ্র করেই এই উৎসবের আগমন বা উদ্ভব।
চলুন এক নজরে জেনে আসি সে প্রসঙ্গে—-
সে প্রসঙ্গে যেতে হলে আমাদের একটু বহু পিছনেই যেতে হবে। যেসময়ে রাজা বাদশারা এই তল্লাটে ছিলেন, শাসন করতেন।
আজ থেকে বহু বছর আগে। এদেশে রাজা -বাদশারা শাসন করতেন।
এদেশীয় হিন্দুরা বাংলা বার মাসের হিসেব কষতো কিংবা বার মাস পালন করতো অনেক অনেক কাল আগে থেকেই। কিন্তু তা ছিল সৌর পঞ্জিকা অনুসারে। এই সৌর পঞ্জিকার শুরু হতো গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় হতে। গ্রেগরীয় হল ইংরেজি পঞ্জিকা বা পাশ্চাত্য দেশের পঞ্জিকা।
যার প্রথম মাস জানুয়ারি। সৌর পঞ্জিকা অনুসারে জানুয়ারি হিসেব করে সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম ,পশ্চিমবঙ্গ , কেরালা, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরাতে নববর্ষ পালিত হত অনেক আগে থেকেই। তবে তখন এটি এতো জাকঁজমক ভাবে পালিত হতো না। তখন নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ ছিল একটি ঋতু ভিত্তিক উৎসব। যার মূল তাৎপর্য ছিল “কৃষিকাজ”। কারণ তখন কৃষকরা ছিল সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভর।।
মোগল সাম্রাজ্যর সময়ে হিজরি পঞ্জিকা মতে সকল ধরনের খাজনা আদায়ের কাজ করা হত। কিন্তু হিজরী পঞ্জিকা ছিল চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই হিজরী মাসের সাথে বাংলায় ফসল উৎপাদন বা খাজনা আদায় কোন ভাবেই মিলত না। প্রতি বারই খাজনার হিসেব গড়মিল হয়ে যেত। কারণ বাঙ্গলার ঋতু গুলোর সাথে হিজরী মাসের কোনরকম ই মিল হতো না।

তখন বাংলার সিংহাসনে ছিলেন মুগল সম্রাট জালাল উদ্দিন মুহান্মদ আকবর। তিনি সুষ্ঠুভাবে খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে পঞ্জিকায় সংস্কার আনার নির্দেশ দেন।
তার জন্য সম্রাট আকবর ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরী চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ফতুল্লাহ শিরাজীর সুপারিশে পারস্যে প্রচলিত ফার্সি বর্ষপঞ্জীর অনুকরণে ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় যখন সম্রাট আকবর যখন সিংহাসন আরোহণ করেন, ঠিক সেই সময় অর্থাৎ ৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬ সাল থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন , পরে ” বঙ্গাব্দ ” বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিতি লাভ করে। (উইকিপিডিয়া :বঙ্গাব্দ এবং পহেলা বৈশাখ)
সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকেই এই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের কথা জানা যায়। তারঁ শাসনামলেই — সকল ধরনের খাজনা চৈত্র মাসের শেষ দিন সম্পূর্ণভাবে পরিশোধ করা হতো। তারপর প্রত্যেক অঞ্চলের ভূমির জমিদারগণ তাদের অধিবাসীদের মিষ্টি মুখ করাতেন। ছিল হালখাতার প্রচলন ও। আরো বিভিন্ন রকম সামাজিক অনুষ্ঠান ও এদিন পালন করা হতো। (উইকিপিডিয়া)
তবে এইযে বর্ষপঞ্জি এটাকে সংস্কার করা হয়। যখন দেশ বিভক্তি ঘটে, তখন বাংলা একাডেমী কর্তৃক বাংলা সন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ সালে। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘র নেতৃত্বে এ কমিটি বিভিন্ন বাংলা মাস ও ঋতুতে গ্রামীণ মানুষের জীবনে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে তুলে ধরেন।
আর তারঁ নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটির সুপারিশ মোতাবেক বাংলা সনের পরিবর্তন আনা হয়। আর তার জন্য ১৪ই এপ্রিল প্রতি বছর আমাদের বাঙ্গলিদের বাংলা নববর্ষ।
তবে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, আসাম, সহ আরো বিভিন্ন প্রদেশ ও কিন্তু বাংলা ভাষা-ভাষীর মানুষ রয়েছে। তার আবার ড.মুহান্মদ শহীদুল্লাহ’র সংস্কার করা এই বাঙ্গলা পঞ্জিকা কে মেনে নেয়নি। তারা সম্রাট আকবরের প্রণীত সেই বাংলা সনকেই মেনে চলেছেন।
যাক, অল্পকথার গল্প লিখতে গিয়ে এক ছোট্ট পাতার ইতিহাসই টেনে আনলাম। ইতিহাস মানেই অনেক বড়, যার কোন কুল কিনারা বোধ হয় হয়না। খালি বাড়তেই থাকে।।
বাঙ্গালিদের সেই আবহমান উৎসবেরই কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়েই গল্প জুড়বো আজ আপনাদের সাথে:
প্রথমেই বলি, মঙ্গলশোভা যাত্রার কথা।।

মঙ্গলশোভাযাত্রা:—
আমাদের পহেলা বৈশাখের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং মূল আকর্ষণ থাকে “মঙ্গল শোভাযাত্রা”। গত ৩০শে নভেম্বর ২০১৬ সালে UNESCO এই উৎসব কে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছিলো।
বাংলাদেশের মানুষের লোকজ উৎসব এবং লোক ঐতিহ্যের নিদর্শন এই মঙ্গল শোভাযাত্রা।।
বাঙ্গালিরা বিশ্বাস করে—- এটির মাধ্যমে সমস্ত রকম অশুভ শক্তির যেন বিনাশ বা পরাজয় ঘটে, মানব জীবনের ভালো দিক, মঙ্গল দিক গুলোর বার্তা ছড়িয়ে দিতেই এই শোভাযাত্রা। এটি একটি অসম্প্রদায়িক উৎসব, যেখানে জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই অংশগ্রহণ করে থাকেন। বলা চলে, সকল মানুষ কে এক করবার একটি প্রতীক এই উৎসব।
এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরা এতে অংশ গ্রহণ করে থাকেন। এতে থাকে মুখোশ, মাটির হাড়ি কিংবা শখের হাড়ি, ছেলেদের কেউ কেউ সাজে কৃষক। যেহেতু এটা কৃষকদের উৎসব তাই। তারপর বেতের হাড়ি থাকে, লক্ষীপেচাঁ, রুপকথার সেই সুখ পাখি ইত্যাদি বিষয়গুলো ছাড়া এই মঙ্গল শোভাযাত্রা হতেই পারে না। তাই অবশ্যই মঙ্গলশোভাযাত্রায় এগুলো থাকবেই।
আর এবিষয় গুলো মাথায় রেখেই সাজানো হয় পহেলা বৈশাখের এই মঙ্গল শোভাযাত্রা।
তবে এখন এটি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই হয় না বরং বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকেই এই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।
১৯৮৫সালে চারুপীঠ নামে যশোরের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রথম এই শোভাযাত্রার আয়োজন করে।
পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক প্রতি বৎসর এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে।
এবার আসি নববর্ষের মিস্টি মুখ করানোর উৎসবে। হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক মিস্টি মুখ করানোর উৎসব। যাকে আমরা “হালখাতা” বলে থাকি।।
হালখাতা:
এই হালখাতা উৎসব মোগল সম্রাট আকবরের সময় থেকেই পালিত হয়ে আসছে।।
এদিন পুরনো সব হিসাব নিকেশ শেষ করে ব্যবসায়ীরা নতুন হিসাবের খাতা খোলেন। আর বছরের প্রথমদিন যে ব্যবসায়ীরা পুরনো সব হিসেব নিকেশ শেষ করে নতুন হিসাবের খাতা খোলেন একেই বলা হয় “ হালখাতা”। এজন্য বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
আর এদিন দোকানে আগত সকল ক্রেতাদের মিষ্টি মুখ করানো হয়ে থাকে।
বটতলার মেলা বা বউ মেলা:

বউমেলা নামটা শুনে যে পাঠক মহলের ভ্রু কুচকেঁ গিয়েছে তা আমি শতভাগ নিশ্চিত। হয়তো অনেকেই বউমেলা নামটা শুনে ভাবছেন
এ আবার কিরকম উৎসব ।
এখানে কি বউ পাওয়া যায়?
এ এক অন্য রকম উৎসব।
বট তলার বউ মেলা। বউ তো কোনভাবেই কিনতে পাওয়া যায় না।
তবে মেয়েদের বিয়ে যাতে তাড়াতাড়ি হতে পারে তার জন্য প্রার্থনা করতে বটতলার নিচে এই মেলা।
চলুন, প্রিয় পাঠক এনিয়ে আরো বিস্তারিতভাবে জেনে আসি।
“ বারো ভুঁইয়া সম্রাট ঈশা খাঁর সোনারগাঁওয়ে প্রাচীনকাল থেকেই এক মেলা বসে যার নাম বউমেলা। কেউ বা আবার এটিকে “বটতলার মেলা” ও বলে থাকেন। এখানকার স্থানীয় মানুষের ধারণা, প্রায় ১০০ বছর আগে কোন এক পহেলা বৈশাখে শুরু হয় এই মেলা। মেলাটি পাঁচ দিনব্যাপী চলে।
একটি প্রাচীন বটবৃক্ষের নিচে এই মেলা বসে। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন দেবী সিদ্ধেশ্বরী এখানে অধিষ্ঠিতা। আর তারঁ পুজোর জন্য ই তাদের এখানে সমবেত হওয়া। বিশেষ করে সনাতন ধর্মের কুমারী মেয়েরা, নববধূরা, এমনকি জননীরা পর্যন্ত তাঁদের মনস্কামনা পূরণের আশায় এই় স্থানে আসেন, এসে পূজা-অর্চনা করেন। বিভিন্ন নৈবদ্য সহযোগে এখানে দেবীর উদ্দেশ্যে পুজো দেন তারা। আবার কেউ কেউ এতে পাঁঠাবলিও দিয়ে থাকেন। আর এই পুজো কে ঘিরে এই স্থানে বসে বিরাট মেলা। আর এই উৎসব কে কেন্দ্র করে মেলা বসে বলেই এটিকে বটতলার মেলা বলা হয়ে থাকে।
আদিবাসীদের বর্ষবরণ:
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের বর্ষবরণ উৎসব দেখার মতো। কেননা এই দিন তারা নতুন পোষাক পরে, তারপর তারা তাদের স্ব স্ব সৃষ্টকর্তার নিকট আরাধনা করে আর তারপর বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে গান নাচ আর আনন্দে মেতে ওঠে।
তাদের সব থেকে উল্লেখ্যযোগ্য উৎসব হচ্ছে– জলকেলি বা পানি উৎসব।।

আবার তাদের এ উৎসবকে বলা হয় “বৈসাবি উৎসব” ও বলা হয়ে থাকে।
তবে আদিবাসীদের আরো একটি উৎসব আছে আর তা হল, বিহু উৎসব।
তাদের তিন রকমের বিহু আছে, বহাগ বিহু, কাতি বিহু, এবং সবশেষ মাঘ বিহু। বৈশাখের প্রথমদিন থেকেই শুরু হয়ে এ উৎসব চলে পরবর্তী ছয় মাস। এটি মূলত: ওপার বাংলার আসামের আদিবাসীদের উৎসব। তবে এপার বাংলার আদিবাসীরাও এটি পালন করে থাকেন।
বৈশাখী মেলা:
বৈশাখে যদি কোথাও বৈশাখি মেলা না বসে তাহলে তা পহেলা বৈশাখ কেউ বলতেই পারবে না। কারণ, পহেলা বৈশাখে বৈশাখী মেলা বসতেই হবে।
এ মেলায় নাগরদোলা, বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, মাটির তৈজস্পত্র, কাঠের পুতুল,আর খাওয়া দাওয়া তো থাকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ছায়ানটের আয়োজনে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান দারুণ উপভোগ্য। বুলবুল ললিতকলা একাডেমী সহ সব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে চলে বৈশাখ কে বরণ করবার আনন্দ আয়োজন।
বাংলাদেশের সকল সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান দিন টি উপলক্ষে নানান ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে।
বৈশাখের গুরুত্বপূর্ণ খাবার তা হচ্ছে, নাড়ু, খই, মুড়ি। কারণ, যেহেতু পহেলা বৈশাখ কৃষি ভিত্তিক উৎসব, তাই এদিন নতুন চালের তৈরি এ খাবার গুলো অনেকেই খেয়ে থাকেন।
আর এবার আসি একটু পান্থা ইলিশ এর গল্পে।। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এখন শহুরে সংস্কৃতিতে একটা নতুন মার্গের উদ্ভব হয়েছে, আর তা হচ্ছে— পান্থা ইলিশ। পহেলা বৈশাখে পান্থা ইলিশ খাওয়া বা খেতেই হবে এটা কিন্তু কোনভাবেই নয়। আর এটা কোনভাবেই আবহমান বাঙ্গলার কোন ঐতিহ্যগত রীতিও নয়। এটা আমাদের শহুরে সংস্কৃতির হাত ধরে ওঠা। এর বাইরে আর কিছু ই নয়। এটা নিয়ে বলা চলে, এটা নতুন প্রজন্মের ই তৈরি করা এটি একটি বানোয়াট সংস্কৃতি।

চিন্তাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তার এক লেখায় বলেন,
“গরিব মানুষের খাবার পান্তাভাত। রাতে খাওয়ার পর অবশিষ্ট ভাত রাখার কোনও উপায় ছিল না; তাই পানি দিয়ে রাখা হতো এবং সকালে আলুভর্তা, পোড়া শুকনো মরিচ ইত্যাদি দিয়ে খাওয়া হতো। আমিও ছোটবেলায় খেয়েছি। কিন্তু এখন পান্তা-ইলিশ ধনী লোকের বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে এবং এটা দুর্মূল্যও বটে যা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতিকে সম্মান দেখানোর পরিবর্তে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে।”
বৈশাখের সাজে যদি দেখি যেহেতু এটা আবহমান বাঙ্গালির উৎসব কৃষিভিত্তিক উৎসব তাই অনেকেই এইদিন বাঙ্গালি ঐতিহ্য হিসেবে ছেলেরা লুঙ্গি, সাথে গেঞ্জি, কেউ বা মাথায় গামছা ও পড়েন। আর মেয়েরা পড়েন লাল পারের শাড়ি। তবে ছেলেদের বেশির ভাগ ই পড়ে লালের উপর সাদা রঙ্গের আচঁড় দেওয়া পাঞ্জাবি।
অনেকেই বলেন, কেনো এই লাল সাদা ভূষণ। অন্য রঙ্গ ও তো হতে পারে?
কিন্তু, বলা হয়ে থাকে —- সূর্যের যে লাল আভা, তার প্রতীক হিসেবেই এই লালের ব্যবহার। গ্রীষ্মে সূর্যের লাল আভায় চারদিক ত্রাহি ত্রাহি করে ওঠে। তারই পরিচয় হিসেবে এই লাল। আর সাদা তো শান্তি শুভ্রতার চিহ্ন।

তাই এদিনে বাঙ্গালির পোশাকে লাল সাদার চিহ্নযুক্ত বস্ত্রই বেশি থাকে।।
সমস্ত পুরাতন, জরা জীর্ণকে বাদ দিয়ে নতুন কে বরণ কে নেওয়ায় এই দিনের বৈশিষ্ট্য।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় সকল সরকারি বেসরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাড়ম্বরের সাথে এই বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ পালিত হয়ে থাকে। আর হবে নাই বা কেনো।
এটা আমাদের বাঙ্গালিদের উৎসব। “বারো মাসে তেরো পার্বণ” এই বাঙ্গালির পরিচয়। গুলোতে পালিত হয়। আর এটা কোন ধর্মের ধর্মীয় উৎসব নয়। এটা অসম্প্রদায়িক উৎসব, বাঙ্গালি সংস্কৃতির পরিচায়ক।
আবহমান বাংলার এ সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিটা বাঙ্গালিরই এই দিনটিকে অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে, বর্ণিলভাবে উদযাপন করা উচিত।
যাই হোক, দিনশেষে সব্বাইকে আবারো নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
আবহমান বাংলা ও বাঙ্গালির এই উৎসব, সংস্কৃতিগুলো বাঁচুক। বাঁচুক এই ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকোর দেশে বাঙ্গালির স্বপ্নগুলো।।
ছবি: সংগৃহীত