প্রীত রেজা একাধারে একজন আলোকচিত্রী, উপস্থাপক, নির্মাতা এবং আরজে। প্রীত রেজা সকলের কাছে একজন ওয়েডিং ফটোগ্রাফার হিসেবেই পরিচিত। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিা করেন ওয়েডিং ডাইরি। তিনি এবিসি রেডিও এফএম ৮৯.২ তে “ফটো টক উইথ প্রীত রেজা” অনুষ্ঠানটিতে হাজির হন তিনি। এছাড়াও এটিএন নিউজে ইয়াং নাইট এবং ডার্করুম নামক দুটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে থাকেন তিনি। বাংলাদেশী আলোকচিত্রী হিসেবে তিনি প্রথম ফুজিফিল্মের অ্যাম্বাসেডর হন। ‘না’ নামে তরুণদের নিয়ে লেখা একটা বই প্রকাশিত হচ্ছে বইমেলায়। প্রকাশিত হয়েছে শব্দশৈলী প্রকাশনী থেকে। বইটি নিয়ে কথোপকথন হয় তার সাথে……
সীমান্ত: বইটির নাম না দেওয়ার কারণটা কি?
প্রীত রেজা: ছোট বেলা থেকে আমি সবচেয়ে বেশি যে শব্দটা শুনেছি তা হলো নাহ। আমাদের সকলকে ছোট বেলা থেকে শুনতে হয় এটা করোনা, ওইটা করো নাহ, ওইখানে যেয়ো নাহ, ওইটা পারবা না, তোমায় দিয়ে হবে না। আমার জীবনের কিছু ঘটনা দিয়েই আমি সকলকে আহবান জানিয়েছি সকল না কে না বলে দেওয়ার জন্য। এজন্যই এই বইটির নাম না দেওয়া।
সীমান্ত: আসলে কি নিয়ে এই বইটা লেখা?
প্রীত রেজা: আসলে আমি মহেশশোলে বড় হয়েছি এবং সেই জায়গা থেকেই আমার এই অবস্থান। আমার বড় হওয়ার ছোট ছোট গল্প দিয়েই তরুণদের কিছু বার্তা দিতে চেয়েছি। আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে ২০ টাকা দিয়ে ছবি তুলতাম তখন অনেক মানুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা আমার পরিচয় দিতে চাইতো নাহ কিন্তু আমি যখন নিউইয়র্কে গিয়ে একটা অনুষ্ঠানে ছবি তুলি তখন সেই মানুষ গুলো আমার কাছে অটোগ্রাফ চায়। আমি এই বইটাতে একবারও বলার চেষ্টা করি নাই আমি এটা করেছি ওইটা করেছি। আমি শুধু বলার চেষ্টা করেছি তোমার যে কাজটা করতে ভালো লাগে,সেই কাজটা করে যাও। একদিন ঠিকই মানুষ তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে। আমি কেন আমার নিজের গল্পের মাধ্যমে সকল তরুণদের কাছে বার্তা দিতে চেয়েছি কারণ আমি যদি এখন স্টিভ জবস কিংবা আমাজনের সিইও এর কথা বলি তাহলে তরুণদের জন্য উপলব্ধি করতে কঠিন হবে তাই আমি আমার জীবনের গল্পকেই বেছে নিয়েছি যাতে তরুনদের উপলব্ধি করতে সহজ হয়।
সীমান্ত: হঠাৎ বই লেখার ইচ্ছে হলো কেন?
প্রীত রেজা: মূলত আমি একজন আলোকচিত্রী। আলোকচিত্র বিষয়ে আগে আমি বই লিখেছি কিন্তু ইদানিং আমার সাথে তরুণদের প্রচুর দেখা হয়। তখন তরুণরা আমাকে তাদের হতাশার কথা,কষ্টের কথা,বেদনার কথা বলে। ফেইসবুকেও আমাকে তারা তাদের হতাশার কথা,বেদনার কথা জানায়। এই ব্যস্ততার জীবনে আমার পক্ষে তাদের সকলের সঙ্গে দেখা করা সত্যিই খুব কঠিন তা যদি আমার সম্ভব হত আমি সকলের সাথে দেখা করতাম। বইটি খুবই সহজ সরল রাখার চেষ্টা করেছি রচনার পর রচনা লেখি নাই যেহেতু তরুণদের বই পড়ার আগ্রহ কম তাই সহজ ভাষায় বইটা লিখেছি যাতে আসল মেসেজটা তারা বইটির মাধ্যমে পেতে পারে তাই বইটি লেখা।
সীমান্ত: একজন লেখক হিসেবে বইমেলায় কি কি পরিবর্তন আনা হলে বইমেলাটা আরো পরিপূর্ণ হত বলে আপনি মনে করেন?
প্রীত রেজা: আমাদের আসলে বই পড়ার অভিজ্ঞতা খুবই কম। আমরা সবসময় সবকিছু এড়িয়ে চলতে চাই। আমরা তরুণরা বই পড়ছি খুবই কম, বই পড়ার পাঠ্য অভ্যাস বাড়াতে হবে আবার তরুণদের উপর দোষ দিলেই হবে নাহ। আসলে তরুণরা কেমন বই পছন্দ করে,কেমন বইয়ের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি, কেমন ভাষায় বই লিখলে তাদের জন্য বইটা পড়তে সহজ হবে সেই ব্যাপারেও গুরুত্ব দিতে হবে। বইমেলা যেন আরে তরুণ বান্ধব হয় যাতে তরুণরা বইমেলায় আরো আগ্রহী হয়। এই পরিবর্তনটা একদিনে হবে নাহ কিন্তু পরিবর্তন শুরু হওয়া দরকার।
সীমান্ত: তরুণদের জন্য আপনার কোন উপদেশ?
প্রীত রেজা: একটা উপদেশ দিবো, আমরা সকলে ভাবি আমায় দিয়ে কিছু হবে নাহ, আমায় দিয়ে এটা হবে নাহ, এটা নেই-ওইটা নেই এসব বাদ দিয়ে। সকল দুঃখকে উড়িয়ে দিয়ে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখো আর পরিশ্রমের মাত্রা যেন কমে না যায় এবং নিজের স্বপ্নটা যেনো দেখা যায়।
সাক্ষাতাকর নিয়েছে: গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত