বদরুল ইসলাম (বরগুনা)
ইরি ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। এ মৌসুমে রোগবালাই কম হওয়ায় ফলনও হয়েছে আশানুরূপ।
কিন্তু ধানের উৎপাদন খরচের চেয়ে বর্তমান বাজার দর অনেক কম হওয়ায় বরগুনার কৃষকরা দারুণভাবে হতাশ। ভেঙেছে তাদের স্বপ্ন।
কৃষকরা জানান, এখন তারা বাজারে প্রতি মণ ইরি ধান সাড়ে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারছেন। এটা উৎপাদন খরচের সঙ্গে একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এতে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচও উঠছে না। স্বাভাবিকভাবে এই ইরি ধানের দাম মণপ্রতি হওয়ার কথা ছিল ৯৫০ টাকা বা তারও বেশি। কিন্তু এই টাকায় ধান সরকারও কিনছে না, আড়তদাররাও কিনছে না। ফলে গড়পড়তায় এখন কৃষক ধানের দাম পাচ্ছেন নির্ধারিত মূল্যের অর্ধেক।
কৃষকরা আরো জানান, ধান কাটা ও মাড়াই করতে তাদের হাজার হাজার টাকা গুনতে হয়েছে। এ ছাড়া জমি তৈরি, চারা রোপণ, সেচ, সার ও কীটনাশকের ব্যবহার করতে হয়েছে।
বরগুনায় ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা ঠেলাগাড়ি, রিকশা ও ভ্যানগাড়ি বোঝাই করে ইরি ধান বিক্রি করতে নিয়ে এসে ক্রেতা না পেয়ে ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন।
অনেকে প্রয়োজন মেটাতে উপায়হীন হয়ে মণপ্রতি ধান সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে হাট-বাজারগুলোতে আড়তদাররা নিজেরা ধান কেনাকাটা না করে ছোট ছোট পাইকারদের মাধ্যমে অল্প মূল্যে ধান কিনে গুদামজাত করছেন বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
মাইঠা এলাকার কৃষক ইউসুফ জানান, যেখানে এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে খরচ হয় সাত-আট হাজার টাকা, সেখানে বাজারে প্রতি মণ ইরি ধান বেচা কেনা হচ্ছে সাড়ে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে।
আরেকজন কৃষক নান্না মিয়া জানান, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি এই ইরি ধানের উৎপাদন করছেন। কিন্তু এখন এই ঋণ শোধ করতে ও পরিবারের খরচ চালাতে পারার ব্যাপারে দুশ্চিন্তায় আছেন।
ইরি ধানের দাম কম হওয়া প্রসঙ্গে বরগুনার একজন ধান ব্যবসায়ী মোঃ হানিফ বলেন, আসলে মিল মালিক ও আড়তদারদের ধান কেনার আগ্রহ খুব কম। কারণ, সরকার এখান থেকে চাল কিনছে খুব কম। তবে সরকার, বড় বড় ব্যাপারী ও পাইকাররা এই ধান কেনা শুরু করলে দাম আগের মত হতে পারে।