বিএনপির চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি ইন্তিকাল করেন।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তারকারী এই নেত্রীর মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করেছে বৈশ্বিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
রয়টার্স শিরোনাম করেছে, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর মঙ্গলবার তিনি মারা যান। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী সরকারপ্রধান হন। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের তীব্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা কয়েক দশক ধরে দেশের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রেখেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিনের শারীরিক জটিলতার কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
চিকিৎসকদের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, খালেদা জিয়া লিভারের সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বুকে ও হৃদযন্ত্রের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আল জাজিরা বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর দল বিএনপি এবং স্থানীয় গণমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। দলটির বিবৃতিতে জানানো হয়, স্থানীয় সময় ভোর ৬টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আল জাজিরা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাঁর মৃত্যুতে দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মহল গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
সিএনএন শিরোনাম করেছে, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং হাসিনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার ৮০ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক প্রজন্মজুড়ে গভীর প্রভাব ফেলেছেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দেশের রাজনীতিকে দীর্ঘদিন দুই ধারায় বিভক্ত করে রেখেছিল। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।
সিএনএনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়াকে একাধিক দুর্নীতির মামলার মুখোমুখি হতে হয়। তবে তিনি এসব মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছিলেন। সর্বশেষ ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে থাকা শেষ দুর্নীতির মামলায় খালাস দেন, ফলে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আইনি সুযোগ তৈরি হয়েছিল।
বিএনপির বিবৃতির বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২০ সালে অসুস্থতার কারণে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর খালেদা জিয়ার পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে তৎকালীন সরকারের কাছে অন্তত ১৮ বার আবেদন করেছিল। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন সেই আবেদনগুলো প্রত্যাখ্যান করে।
ভারতের এনডিটিভি জানিয়েছে, দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া মারা গেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল ৬টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিএনপি এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এনডিটিভি শিরোনাম করেছে, দীর্ঘ অসুস্থতার পর মারা গেলেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিনের অসুস্থতার পর খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, তিনি অ্যাডভান্সড লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন। এ ছাড়া তাঁর আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, বুকে সমস্যা এবং হৃদ্রোগজনিত জটিলতাও ছিল।
টিআরটি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ অসুস্থতার পর ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে। খালিজ টাইমস শিরোনাম করেছে, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছে।
সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো খালেদা জিয়ার মৃত্যুকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতীকী ঘটনা হিসেবে দেখছে, যা দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসে দীর্ঘদিন আলোচিত হয়ে থাকবে।
সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা, সিএনএন, এএফপি, এনডিটিভি, টিআরটি ওয়ার্ল্ড, খালিজ টাইমস
সিএ/এএ


