জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়টির তৎকালীন উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদের সম্পৃক্ততার কথা উঠে এসেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২–এ দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে বিচার চলমান রয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
জবানবন্দিতে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিরীহ ও নিরস্ত্র ছাত্র–জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তৎকালীন উপাচার্য হাসিবুর রশীদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকলেও তিনি অন্য আসামিদের বেআইনি কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
এ মামলায় মোট আসামি ৩০ জন। তাঁদের মধ্যে সাবেক উপাচার্য হাসিবুর রশীদসহ ২৪ জন পলাতক রয়েছেন। অপর ছয়জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
আরেক পলাতক আসামি, তৎকালীন রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তিনিও আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের সহযোগিতায় তিনি পুলিশ সদস্যদের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে আবু সাঈদকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা ও অন্যদের গুরুতর আহত করার নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনার পর বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক ও নিরীহ ছাত্র–জনতাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতনের মাধ্যমে হয়রানি করা হয়, অথচ প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
গ্রেপ্তার ছয় আসামির একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর শরিফুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থেকেও হত্যাকাণ্ডে উসকানি ও সহযোগিতা করেন এবং পুলিশের বেআইনি কার্যক্রম রোধে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
এ ছাড়া রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়ার বিরুদ্ধেও উসকানি ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। জবানবন্দিতে বলা হয়, গত বছরের ১১ জুলাই তিনি আবু সাঈদকে থাপ্পড় মারেন।
তদন্তে আরও উঠে আসে, পুলিশের সাবেক এএসআই আমির হোসেন ও সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করেন।
এদিকে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় এক মাস বাড়িয়ে আগামী ২৮ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছে ট্রাইব্যুনাল–২। গত বছরের ২০ জুলাই সেখানে তিন আন্দোলনকারী গুলিতে নিহত হন।
সিএ/এএ


