ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে দখলকৃত কিছু ভূখণ্ড বিনিময়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দনবাস অঞ্চল পুরোপুরি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণেই থাকবে—এ বিষয়ে কোনো আপসের সুযোগ নেই।
রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় দৈনিক কমেরসান্ত-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪ ডিসেম্বর রাতে ক্রেমলিনে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই অবস্থানের কথা জানান পুতিন। পত্রিকাটির ক্রেমলিন সংবাদদাতা আন্দ্রেই কোলেসনিকভের বরাতে বলা হয়, দনবাসের বাইরে রুশ নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু ভূখণ্ড নিয়ে অদলবদল বা আংশিক হস্তান্তরের সম্ভাবনা তিনি নাকচ করেননি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুতিন ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন যে আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকে দেওয়া ছাড় ও বোঝাপড়া এখনো কার্যকর রয়েছে। অর্থাৎ দনবাসকে রাশিয়ার অংশ হিসেবেই ধরে নেওয়া হবে—এই নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসছে না।
অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বুধবার জানান, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ২০ দফার একটি শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা দনবাসের অবশিষ্ট অংশ রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সমঝোতা হয়নি। একই সঙ্গে রুশ দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও মতবিরোধ রয়ে গেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী ইউরোপের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এই সংঘাত বন্ধের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করেছেন। তাঁর বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। গত আগস্টে আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে হওয়া শীর্ষ বৈঠকের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
রাশিয়ার দাবি অনুযায়ী, ২০১৪ সালে সংযুক্ত করা ক্রিমিয়ার পাশাপাশি তারা বর্তমানে দনবাসের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের প্রায় ৭৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এর আগে শান্তিচুক্তির শর্ত হিসেবে পুতিন ইউক্রেনকে দনবাস, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন।
কমেরসান্ত আরও জানায়, বৈঠকে পুতিন ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক স্থাপনা জাপোরিঝঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর মতে, এই কেন্দ্রটি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এই কেন্দ্রের কাছে ক্রিপ্টো মাইনিং বা ডিজিটাল মুদ্রা উৎপাদনে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের একটি অংশ ইউক্রেনকেও সরবরাহ করার সম্ভাবনার কথা আলোচনায় এসেছে।
সূত্র: রয়টার্স
সিএ/জেএইচ


