মায়ানমারে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর ইয়াঙ্গুনে জারি থাকা দীর্ঘ সময়ের কারফিউ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জান্তা সরকার। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দেওয়া এ ঘোষণায় বলা হয়েছে, দেশজুড়ে শুরু হতে যাওয়া নির্বাচনের আগে এটিকে ‘স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার’ একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০২১ সালে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পরপরই দেশজুড়ে গণতন্ত্রপন্থী ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালালে ইয়াঙ্গুনে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। প্রায় ৭০ লাখ মানুষের এই শহরে দীর্ঘ সময় ধরে চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ ছিল।
পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে কারফিউয়ের সময়সীমা কমানো হয়। জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত যে কারফিউ বলবৎ ছিল, তা শনিবার থেকে পুরোপুরি তুলে নেওয়া হবে।
জান্তা সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুনের প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইয়াঙ্গুন অঞ্চলের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এখন উন্নতি করছে।’ তিনি আরও জানান, মানুষের চলাচলের সুবিধা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সামরিক বাহিনী বিক্ষোভ দমন করলেও বহু গণতন্ত্রপন্থী কর্মী শহর ছেড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেরিলা লড়াইয়ে অংশ নেন। এর ফলে মায়ানমার দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
এই সংঘাতে হাজারো মানুষ নিহত হয়েছে। বর্তমানে ৩৬ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।
সেনাবাহিনীর দাবি, অং সান সু চির সরকার ব্যাপক ভোট কারচুপির মাধ্যমে সামরিকপন্থী শিবিরকে হারিয়েছিল, এ অভিযোগের ভিত্তিতেই তারা ক্ষমতা দখল করে। এরই ধারাবাহিকতায় জান্তা সরকার নতুন নির্বাচনের আয়োজন করেছে, যা রবিবার থেকে ধাপে ধাপে শুরু হয়ে এক মাস ধরে চলবে।
জান্তা দাবি করছে, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। তবে অং সান সু চি এখনও কারাবন্দি, তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রপন্থী নজরদারি সংস্থাগুলো এই নির্বাচনকে সামরিক শাসনের ‘পুনর্ব্র্যান্ডিং’-এর চেষ্টা বলে ব্যাপক সমালোচনা করছে।
যদিও ইয়াঙ্গুনে কারফিউয়ের সময়সীমা শেষ দিকে মাত্র দুই ঘণ্টায় সীমিত ছিল, তবু কোভিড-১৯ মহামারি ও অভ্যুত্থানের পর থেকে শহরের নাইটলাইফ কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্সি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে এবং অনেক রেস্তোরাঁ ও বার সপ্তাহান্তেও আগেভাগে বন্ধ হয়ে যায়।
এ ছাড়া প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে জান্তা সরকার বাধ্যতামূলক নিয়োগের আদেশ জারি করেছে। এতে তরুণদের সেনাবাহিনীতে টেনে নেওয়া হচ্ছে, যার ফলে তারা রাতের বেলায় আটক হওয়ার আশঙ্কায় আরও সতর্ক হয়ে উঠেছে।
সিএ/এএ


