সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে না ফেরার দেশে চলে গেছেন বলিউডের ‘হি-ম্যান’ খ্যাত ধর্মেন্দ্র কেওয়াল কৃষণ দেওল। ছয় দশকজুড়ে বিস্তৃত তাঁর অভিনয়জীবন ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়। বয়স ৮৮ হলেও দীর্ঘ সময় দর্শককে চুম্বকের মতো পর্দার সামনে ধরে রাখার ক্ষমতা ছিল তাঁর। ক্যারিয়ারে ছয়টি ব্লকবাস্টার ও সাতটি সুপারহিটসহ মোট ৭৫টি সফল সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। সংখ্যার বিচারে বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য পেলেও আজীবন তাঁর নামের পাশে ‘সুপারস্টার’ তকমা জোটেনি।
অ্যাকশন হিরো থেকে রোমান্টিক চরিত্র—সব ধরনের ভূমিকাতেই সাবলীল ছিলেন ধর্মেন্দ্র। অনেক সমসাময়িক নায়কের তুলনায় বক্স অফিসে তাঁর সাফল্য ছিল বেশি ও দীর্ঘস্থায়ী। তবু চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের মতে, সময়, বাজার এবং মিডিয়ার কাঠামোগত পরিবর্তনের কারণে তিনি কখনোই সেই নির্দিষ্ট ‘সুপারস্টার’ পরিচয়ে আবদ্ধ হননি।
বিশ্লেষকদের মতে, ‘সুপারস্টার’ শব্দটির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে। বিশেষ করে অমিতাভ বচ্চনের ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’ ভাবমূর্তি এককভাবে বক্স অফিসে ঝড় তোলে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়জুড়ে গণউন্মাদনা তৈরি করে। এই তকমা সাধারণত সেই অভিনেতাদের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়, যারা একটি নির্দিষ্ট যুগে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। ধর্মেন্দ্রর সাফল্য দীর্ঘ সময়জুড়ে ছড়িয়ে ছিল, কিন্তু অমিতাভ বা পরবর্তী সময়ে শাহরুখ খানের মতো কোনো এক যুগের একক প্রতীক হয়ে ওঠেননি তিনি।
বাজার ও আন্তর্জাতিক পরিচিতির দিক থেকেও পার্থক্য ছিল। শাহরুখ খান তাঁর রোমান্টিক ভাবমূর্তি দিয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে, বিশেষ করে প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এই বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতাই তাঁকে ‘সুপারস্টার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। ধর্মেন্দ্রর জনপ্রিয়তা মূলত ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, আন্তর্জাতিক পরিসরে তাঁর উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম।
মিডিয়া কাঠামোও বড় একটি ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অমিতাভ ও শাহরুখের উত্থানের সময় ভারতের চলচ্চিত্র মিডিয়া অনেক বেশি সংগঠিত ও প্রভাবশালী ছিল, যা তারকাদের ভাবমূর্তি নির্মাণ ও প্রচারে সহায়ক হয়। ধর্মেন্দ্রর সময়কালে এই ধরনের পরিকল্পিত প্রচারণা ও ব্র্যান্ডিংয়ের সুযোগ সীমিত ছিল। ফলে বিপুল জনপ্রিয়তা ও সফল ক্যারিয়ার থাকা সত্ত্বেও তিনি ‘সুপারস্টার’ তকমার বাইরে থেকেই গেছেন।
সিএ/বিই


