গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে বিভিন্ন শারীরিক ও হরমোনজনিত পরিবর্তন ঘটে, যার প্রভাব পড়ে ত্বকের ওপরও। এই সময় ত্বকে চুলকানি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর পেছনে থাকতে পারে নানা কারণ। কখনো সাধারণ শুষ্কতা বা অ্যালার্জির কারণে চুলকানি হয়, আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি যকৃতজনিত সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। অনেক সময় সহজ যত্ন ও চিকিৎসায় চুলকানি কমে গেলেও কখনো এটি তীব্র অস্বস্তি ও যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি ও পেটের আকার বড় হওয়ার ফলে ত্বক টানটান হয়ে পড়ে। এই স্ট্রেচিংয়ের কারণে ত্বকে চুলকানি দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ত্বক স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা চুলকানির প্রবণতা বাড়ায়।
এই সময়ে ত্বকের শুষ্কতাও বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে ত্বক আরও বেশি শুষ্ক হতে পারে। এর ফলে চুলকানি বাড়তে পারে। এছাড়া সাবান, লোশন, ডিটারজেন্ট কিংবা পারফিউমে অ্যালার্জির কারণেও চুলকানি হতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় যকৃতের একটি বিশেষ সমস্যা দেখা দেয়, যাকে ইন্ট্রা হেপাটিক কোলেস্টেসিস বলা হয়। এতে যকৃতের ভেতরে পিত্ত জমে যায় বা আটকে থাকে। মূলত হরমোনজনিত কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে। এতে শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তালুতে তীব্র চুলকানি হয়, যা সাধারণত রাতে বেশি বাড়ে। এর সঙ্গে হালকা জন্ডিস, প্রস্রাবের রং হলদে হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
এছাড়া স্ক্যাবিস, অ্যাকজিমার মতো সাধারণ ত্বকজনিত রোগও গর্ভাবস্থায় দেখা দিতে পারে, যা চুলকানির কারণ হতে পারে।
এই ধরনের চুলকানি কমাতে কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন। সুগন্ধি বা কেমিক্যালমুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। প্রতিদিন ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা উচিত, কারণ অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের শুষ্কতা বাড়িয়ে দেয়।
সুতি কাপড় পরলে ত্বক আরাম পায় এবং চুলকানি তুলনামূলক কম হয়। অ্যালার্জিজনিত চুলকানির ক্ষেত্রে কিছু অ্যান্টি হিস্টামিন গর্ভাবস্থায় নিরাপদ হলেও অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলো গ্রহণ করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, ফলে ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ সহজেই আক্রমণ করতে পারে। স্ক্যাবিসের মতো সংক্রামক ত্বকের রোগ এড়াতে অন্যের ব্যবহার্য জিনিস ব্যবহার না করা এবং অতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
চুলকানি যদি খুব বেশি হয় এবং এর সঙ্গে হালকা জন্ডিস বা প্রস্রাবের রং হলদে হয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রয়োজনে যকৃতের বিভিন্ন পরীক্ষা করিয়ে সঠিক কারণ নির্ণয় করা জরুরি।
সিএ/জেএইচ


