জাতীয় ঐক্য ও সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করাই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে মন্তব্য করেছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেছেন, এত বিরোধ, এত বিভেদ ও এত সংকট নিয়ে কোনো দেশ টিকে থাকতে পারে না, একই সঙ্গে কোনো সরকারও কার্যকরভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন মতিউর রহমান। রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু হোটেলে দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক, রেডিও-টেলিভিশনের বার্তাপ্রধান এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এই সভার আয়োজন করে ‘তারেক রহমান-স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটি’। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
মতবিনিময় সভায় মতিউর রহমান বলেন, দেশে দীর্ঘদিন ধরে একটি রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাঁর মতে, এই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান আরও আগে দেশে ফিরতে পারলে বিএনপি এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হতে পারত। তিনি বলেন, তারেক রহমানের অনুপস্থিতি বিএনপির ভেতরে ও বাইরে নানা প্রশ্ন ও বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি করেছে।
আগামী দিনে সরকার গঠনকারী দলের জন্য সময়টি হবে বাংলাদেশের গত ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন সময়—এমন মন্তব্য করে মতিউর রহমান বলেন, এই বাস্তবতায় বিএনপির কাছ থেকে আরও বেশি সহনশীলতা এবং সমালোচনা গ্রহণের মানসিকতা প্রত্যাশিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিএনপি এসব বিষয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাবে।
মতিউর রহমান বলেন, বিভিন্ন জরিপে বিএনপি এখনো দেশের সবচেয়ে বড় দল হিসেবে উঠে এসেছে এবং নির্বাচনে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, যে দল ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব, আচরণ ও বিনয় আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তিনি বিএনপির প্রার্থী তালিকা নিয়েও মানুষের মধ্যে তেমন উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না উল্লেখ করে বলেন, কিছু জায়গায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে কি না, তা ভেবে দেখা যেতে পারে।
প্রথম আলো সম্পাদক বলেন, বিএনপির শাসনামলে সংবাদপত্র খুব স্বস্তিতে ছিল—এমন দাবি তিনি করছেন না। তবে তুলনামূলকভাবে সে সময়টি ছিল কিছুটা বেশি সহনশীল। অন্যদিকে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের ১৫–১৬ বছরে সংবাদপত্র শিল্প সবচেয়ে বেশি ভীতি ও চাপের মধ্য দিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে শুধু সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করলেই হবে না; সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হবে একটি জাতীয় ঐক্য ও সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করা। এত বিভক্ত সমাজ নিয়ে কোনো দেশ এগোতে পারে না।
মতিউর রহমান আরও বলেন, ‘এই সময়টাতে শুধু প্রথম আলো নয়, পুরো গণমাধ্যমকেই ভয়াবহ চাপের মধ্যে থাকতে হয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে তা ছিল ভয়ংকর।’ তিনি এ সময় ডিজিএফআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সরাসরি হস্তক্ষেপ, মালিকানা বদল, সম্পাদক পরিবর্তন এবং শেয়ার হস্তান্তরের চেষ্টার কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, সরকার যদি সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক পথে এগোতে চায়, তাহলে সংবাদপত্রের সমালোচনা শুনতে হবে। তাঁর ভাষায়, ‘শুনবেন, জানবেন—মানবেন কি না, সেটি সরকারের সিদ্ধান্ত। কিন্তু না শুনলে ভুলের পুনরাবৃত্তি হবেই।’
সিএ/জেএইচ


