মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) এই ফোনালাপ হয় বলে এক্সে দেওয়া পোস্টে নিজেই জানিয়েছেন মোদি। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের জেরে যখন নয়াদিল্লি–ওয়াশিংটনের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে, ঠিক সে সময়ই দুই নেতার এই আলাপকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
গত জুলাইয়ে ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় আমেরিকা ভারতের কিছু রপ্তানি পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে উন্নীত করেছে। এতে টেক্সটাইল, রাসায়নিক, চিংড়ি ও খাদ্যপণ্যের রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। এসব শুল্ক থেকে ছাড় পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত।
মোদি তাঁর পোস্টে লিখেছেন, “আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।” তিনি এই আলাপকে “উষ্ণ ও আন্তরিক” বলে উল্লেখ করেন। বলেন, বৈশ্বিক শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দুই দেশ একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।
হোয়াইট হাউসও ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে, যদিও আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপের পর থেকে মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে এটি ছিল অন্তত তৃতীয় আলোচনা। মার্কিন শুল্কের কারণে ভারতীয় পণ্য রপ্তানি গত কয়েক মাসে কমে গেছে—সরকারি তথ্যমতে, অক্টোবর মাসে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৯ শতাংশ।
রাশিয়ার তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতের রিফাইনারিগুলো রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমাতে বাধ্য হচ্ছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মস্কোর ওপর চাপ বাড়ানোর অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এ ছাড়া চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের উপবাণিজ্য প্রতিনিধি রিক সুইটজার দুই দিনের সফরে নয়াদিল্লি যান। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার জেরে আরোপিত শুল্কে ছাড় চেয়ে ভারত আলোচনার চেষ্টা করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক নিয়ে কোনো তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেনি।
ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, বছর শেষ হওয়ার আগেই দুই দেশের মধ্যে কোনো বাণিজ্যচুক্তি হবে কি না—তা নিশ্চিত নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমাক এবং মার্কিন কৃষিপণ্য বিশেষ করে সয়াবিনের জন্য বাজার খুলে দিক।
এরই মধ্যে পুতিনের ভারত সফরকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আবারও আলোচনায় এসেছে। রাশিয়া ভারতকে অব্যাহত জ্বালানি সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে চ্যালেঞ্জ করেছে। ভারত কোনোভাবেই তেল আমদানিকে রাজনৈতিক চাপে ছাড়তে রাজি নয় বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে।
দুই দেশের বাণিজ্য–সংকট নিরসনের আলোচনাও এখনো চলছে। তবে শুল্ক সংকটে ভারতের রপ্তানিতে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা কমার সম্ভাবনা এখনই দেখা যাচ্ছে না।
সিএ/এএ


