ব্রাজিলের কিংবদন্তি কাফু ও আর্জেন্টাইন তারকা ক্লদিও ক্যানিজিয়াকে ঢাকায় আনার ঘোষণা দিয়ে দেশের ফুটবলসমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল এএফবি বক্সিং প্রমোশন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। জানানো হয়েছিল, লাতিন আমেরিকার এই দুই তারকা ১১ ডিসেম্বর ঢাকায় পা রাখবেন। এর আগে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও বাংলাদেশকে নিয়ে তিন দলের টুর্নামেন্ট আয়োজনের ঘোষণাও দেওয়া হয়।
কিন্তু বাস্তবে কিছুই ঘটেনি। সোমবার সাংবাদিক লাঞ্ছনা ও শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে গতকাল লাতিন বাংলা সুপার কাপের জন্য দেওয়া জাতীয় স্টেডিয়ামের বরাদ্দ বাতিল করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। নানা অব্যবস্থাপনা ও অসঙ্গতি পর্যালোচনা করে দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সংস্থা বুঝতে পারে—কাফু ও ক্যানিজিয়ার নাম ভাঙিয়ে সমর্থকদের সঙ্গে প্রতারণাই করেছেন আয়োজকরা। আর্থিক জটিলতার কারণে ঢাকায় আসছেন না দুই তারকা; আয়োজকদের ব্যবহৃত শুভেচ্ছা ভিডিওও এআই প্রোডাকশন বলে জানা গেছে।
মূল অভিযোগগুলো হলো—ম্যাচ টিকিট বিক্রির ৫০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ না করা, ম্যাচশেষে স্টেডিয়াম পরিষ্কারের দায়িত্ব পালন না করা, স্পনসরশিপ ও সম্প্রচার স্বত্ব নিয়ে লুকোছাপা করা। এসব কারণে এএফবি বক্সিং প্রমোশনের বরাদ্দ বাতিল করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ফলে আগামীকাল সাও বার্নাদো (ব্রাজিল) ও অ্যাতলেটিকো চার্লোন (আর্জেন্টিনা)-এর মধ্যকার ম্যাচ স্থগিত হয়ে গেছে।
এর মধ্যেই সোমবার আর্জেন্টিনার ক্লাব অ্যাতলেটিকো চার্লোন ও বাংলাদেশের ফিউচার স্টারসের ম্যাচে ঘটে মারামারি। খেলায় তিন নম্বর জার্সিধারী ইহসান হাবিব রেদোয়ান ইচ্ছাকৃতভাবে এক আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়কে লাথি মারেন এবং আরেকজনের মাথায় আঘাত করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় ওঠে ফুটবলমহলে।
ফুটবলারদের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার নামে অংশ নেওয়া দলগুলো প্রকৃতপক্ষে অপেশাদার। গুঞ্জন—সেসব দেশের পাড়ার ফুটবলারদের নিয়ে দল সাজানো হয়। বাংলাদেশের দলও সাজানো হয় রেড অ্যান্ড গ্রিন ফিউচার স্টার ক্লাব ও অনূর্ধ্ব-১৭ দলের কয়েকজনকে নিয়ে।
৫ ডিসেম্বর শুরু হওয়া লাতিন বাংলা সুপার কাপের শুরু থেকে ছিল নানামুখী বিশৃঙ্খলা। অনলাইন স্ক্রিনে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার নাম-লোগো ব্যবহার করে নিম্নমানের খেলাকে আন্তর্জাতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা, যেখানে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের ভিউ ছিল লাখের ওপরে—এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে অনলাইন বেটিংয়ের সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে।
শুধু আয়োজকদের নয়, প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় স্টেডিয়াম বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েও। যেখানে মোহামেডান বা আবাহনীর মতো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবও নিয়মিত হোম ভেন্যু পায় না, সেখানে একটি অপেশাদার প্রতিযোগিতার জন্য মাঠ বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে সমালোচনা তীব্র হয়েছে। আরও আলোচনায় রয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সায় এবং নিজেদের বয়সভিত্তিক একটি দলকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া—যা দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
সিএ/এএ


