দীর্ঘ ভ্রমণ কিংবা ব্যস্ততার কারণে অনেকেই প্রস্রাবের তাগিদ পেয়েও তা সাময়িকভাবে চেপে রাখেন। অনেকে বিষয়টিকে সাধারণ অভ্যাস মনে করলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এক ঘণ্টা প্রস্রাব চেপে রাখলে শরীরে কিছু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যদিও এতে বড় কোনো ঝুঁকি সাধারণত হয় না, তবে এটিকে কখনোই নিয়মিত অভ্যাসে রূপ দেওয়া উচিত নয়।
এক ঘণ্টা প্রস্রাব চেপে রাখলে তাৎক্ষণিক যে পরিবর্তনগুলো হয়
অস্বস্তি ও চাপ তৈরি:
প্রস্রাব চেপে রাখলে মূত্রথলিতে চাপ বাড়ে। এতে তলপেটে অস্বস্তি, ব্যথা বা টান লাগার অনুভূতি দেখা দিতে পারে।
তীব্র তাগিদ ও মনোযোগে ব্যাঘাত:
মস্তিষ্কে বারবার সংকেত পৌঁছানোর ফলে প্রস্রাবের তাগিদ আরও বাড়ে, যা কাজের প্রতি মনোযোগে প্রভাব ফেলতে পারে।
পেশির প্রসারণ:
মূত্রথলির পেশিগুলো অতিরিক্ত প্রস্রাব ধারণ করতে প্রসারিত হয়, যা সাময়িক অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞের ব্যাখ্যা
একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মূত্রথলি সাধারণত ৩৫০–৫০০ মিলি প্রস্রাব ধারণ করতে পারে। জরুরি পরিস্থিতিতে এক ঘণ্টা চেপে রাখলে গুরুতর কোনো সমস্যা হয় না। তবে বিষয়টি নিয়মিত করলে ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
এক ঘণ্টা চেপে রাখলে কি ইউটিআই হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এক ঘণ্টা প্রস্রাব আটকে রাখলে ইউটিআই হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে কেউ যদি নিয়মিত ৩–৪ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে রাখেন, তখন মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি দ্রুত বাড়ে। কারণ আটকে থাকা প্রস্রাব ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধির উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে।
অভ্যাসে পরিণত হলে যেসব ঝুঁকি তৈরি হতে পারে
মূত্রথলির পেশি দুর্বলতা:
দীর্ঘদিন ধরে প্রস্রাব চেপে রাখলে ব্লাডারের পেশি দুর্বল হয়ে প্রস্রাব সম্পূর্ণ বের না হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
কিডনির ওপর চাপ:
মূত্রথলির বাড়তি চাপ ধীরে ধীরে কিডনির ওপর প্রভাব ফেলে, যা কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ব্লাডারে প্রদাহ ও পাথর:
প্রস্রাব আটকে রাখলে ইউরিনের খনিজ পদার্থ জমাট বেঁধে পাথর তৈরি করতে পারে।
মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই):
নিয়মিত এমন অভ্যাস থাকলে ইউটিআই হওয়া সবচেয়ে সাধারণ স্বাস্থ্যঝুঁকি।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
যখনই প্রস্রাবের তাগিদ অনুভব করবেন, তখনই টয়লেট ব্যবহার করা উচিত। বিশেষ করে যারা পর্যাপ্ত পানি পান করেন, তাদের ক্ষেত্রে দেরি করে রাখা আরও অনুচিত। জরুরি পরিস্থিতিতে এক ঘণ্টা সামলানো গেলেও এটিকে কখনো অভ্যাসে পরিণত করা উচিত নয়।
সুস্থ থাকতে নিয়মিত সময়মতো প্রস্রাব ত্যাগ করাই সবচেয়ে নিরাপদ।
সিএ/এএ


