আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্বাচনের আগে ও পরে অন্তত এক মাস সেনা ও বিশেষায়িত বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি। মোট ৯ দফা দাবি উত্থাপন করে সংগঠন দুটি শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানায়।
সভায় লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের অতীত নির্বাচনী অভিজ্ঞতা অত্যন্ত বেদনাদায়ক—একমাত্র ব্যতিক্রম ২০০৮ সালের নির্বাচন। স্বাধীনতার পর প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে, নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘুরা হামলার শিকার হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্মের অপব্যবহার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণা–বিদ্বেষ ছড়ানো এবং ধর্মীয় সমাবেশে উসকানিমূলক বক্তৃতা সংখ্যালঘুদের সবসময় শঙ্কার মধ্যে রাখে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে, যা ভোট প্রদানে অনীহা সৃষ্টি করে। এ অবস্থায় সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় উদ্যোগ জরুরি বলে মত দেন বক্তারা।
সংগঠন দুটির ৯ দফা দাবি
১. মুক্তিযুদ্ধ ও গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় সংস্কারসহ ১৯৭২-এর সংবিধানকে রাজনীতির ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ এবং রাজনীতি ও নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
২. ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় আনা।
৩. জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং এ বিষয়ে আইনগত বাধ্যবাধকতা তৈরি করা।
৪. জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে অন্তত এক মাস সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় সেনা ও বিশেষায়িত বাহিনী মোতায়েন; স্থানীয় নির্বাচনে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত।
৫. জীবন–জীবিকার সব ক্ষেত্রে সমঅধিকার নিশ্চিত করা এবং সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ–পদোন্নতিতে বৈষম্য দূর করা।
৬. গণ-অভ্যুত্থানের পর নির্বিচারে চাকরিচ্যুত সরকারি–আধাসরকারি কর্মচারীদের পুনর্বহাল।
৭. সংখ্যালঘুদের বাড়ি–ব্যবসা–মন্দিরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং চাঁদাবাজি বন্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ।
৮. ভিত্তিহীন ও বিদ্বেষপ্রসূত মামলাগুলো প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তি।
৯. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মূল আট দফা দাবি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ব্যক্তিরা
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার, গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, চর্চা ডটকমের সম্পাদক সোহরাব হাসান, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি হাসান হাফিজ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল।
সিএ/এএ


