ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের জন্য ৩৪ হাজার মনোনয়নপত্র, লাখ লাখ ফরম, পরিচয়পত্র ও নির্বাচনী প্যাকেটের ছাপানোর কাজ ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে মোট ২৫ কোটি ৫৪ লাখ ব্যালট প্রিন্ট করা হবে। এখন শুধু তফসিল ঘোষণার অপেক্ষা। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজনের লক্ষ্য নিয়ে আগামী সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
ইসি সূত্র জানায়, আইন ও বিধি সংশোধনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন যাবতীয় নির্বাচনী সামগ্রী ছাপানোর কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩৪ হাজার মনোনয়নপত্র, প্রায় ৫ লাখ ফরম এবং ১০ হাজার প্রতীকের পোস্টার। নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ২০ লাখ বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটের মধ্যে ১৭ লাখ প্রস্তুত রয়েছে।
এ ছাড়া পর্যবেক্ষক নীতিমালা ১০ হাজার পিস, প্রিজাইডিং অফিসারদের জন্য ৪৩ হাজার পরিচয়পত্র, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের জন্য ৩ লাখ এবং পোলিং অফিসারদের জন্য ৬ লাখ পরিচয়পত্র ছাপানো হয়েছে। পাশাপাশি পোলিং এজেন্টদের জন্য ৩২ লাখ পরিচয়পত্রের কাজও শেষ হয়েছে। তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, আচরণবিধি ও নির্বাচনী পরিচালক ম্যানুয়েল সংক্রান্ত আইন-বিধি ফরম ছাপানো এখনো শুরু হয়নি।
ছাপার কাজ ও প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাউসদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা হবে আর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হবে।’
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। ভোটারের সংখ্যা অনুযায়ী দুই ভোটের জন্য মোট ২৫ কোটি ৫৪ লাখ ব্যালট প্রিন্ট করা হবে। নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যার বেশি ব্যালট ছাপানো হবে না বলে জানিয়েছে ইসির সংশ্লিষ্ট শাখা। দেশে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার এবং নারী ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ২৩৪ জন।
ব্যালট প্রিন্টিং সম্পর্কে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘সরকারি প্রেস থেকে ব্যালট পেপার এবং আর্মি সিকিউরিটি প্রেস থেকে প্রবাসীদের ব্যালট পেপার প্রিন্ট করা হচ্ছে। প্রিন্টিংয়ের সঙ্গে যারা রেসপেক্টিভ রিপ্রেজেন্টেটিভ আছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং তার নিয়ন্ত্রণাধীন গভমেন্ট প্রেস ওনাকে ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধায়নের অনুরোধ করা হয়েছে। দ্রুত সকল প্রিন্টিয়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে।’ তিনি জানান, তেজগাঁও ও বিমানবন্দর এলাকায় থাকা ব্যালট সর্টিং সেন্টারগুলোতে স্টেকহোল্ডারদের পরিদর্শন ব্যবস্থার জন্য ডাক বিভাগকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
গত শনিবার সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তুতি যাচাই করতে মক ভোটিং আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। এতে ভোটার আইডেন্টিফিকেশন, ব্যালট সিল দেওয়া, ভোট বাক্সে ফেলা এবং সময় ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করা হয়। প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গোপন কক্ষ বাড়ালে ভোটের চাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। চূড়ান্ত বিশ্লেষণ শেষে সময় ও ভোট প্রবাহ সম্পর্কিত তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হবে।
ইসি সচিব বলেন, মক ভোটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল সময় পরিমাপ ও ভোটের প্রবাহ নির্ণয় করা। সমতল ও পাহাড়ি অঞ্চলের বাস্তবতায় ব্যবধান থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে গোপন কক্ষ বাড়ালে ভোটের চাপ সহজ হবে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন করতে সারাদেশে ৪২ হাজার ৭৬১টি কেন্দ্র এবং ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী ভোটকক্ষ ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২টি এবং পুরুষ ভোটকক্ষ ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭টি।
সরকারের পক্ষ থেকে গণভোটের সময় জানানোর পর অতিরিক্ত ব্যালট পেপার, অতিরিক্ত ভোটদানের কক্ষ, বাজেট বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি।
সিএ/ইরি


