সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২৪ নভেম্বর) সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ভূতত্ত্ববিদ, দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকরা অংশগ্রহণ করেন। সভায় বিশেষজ্ঞরা জানান, আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই; বরং প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ দেন দ্রুত লিখিত পরামর্শ প্রদান করার জন্য। তিনি বলেন, ‘‘আমরা হাত গুটিয়ে থাকতে চাই না, কিন্তু অবৈজ্ঞানিক কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করতে চাই না। সরকারের পক্ষ থেকে ভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।’’ এছাড়া তিনি প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ কমিটি ও টাস্কফোর্স গঠনের পরিকল্পনার বিষয়েও জানান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, দুর্যোগ ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আলী রিয়াজ।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে অংশগ্রহণ করেন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির প্রফেসর মো. জয়নুল আবেদীন; বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী, ড. তাহমীদ মালিক আল-হুসাইনী ও ড. তানভীর মনজুর; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান ও ড. হুমায়ুন আখতার; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম; বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মমিনুল ইসলাম ও আবহাওয়াবিদ রুবাইয়্যাত কবীর; ভূতত্ত্ববিদ ড. রেশাদ মো. ইকরাম আলী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ ড. মো. শাখাওয়াত হোসাইন; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণতা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান এবং বুয়েটের অধ্যাপক ইসরাত ইসলাম।
সভায় বিশেষভাবে আলোচনা হয় জনসচেতনতা, প্রস্তুতি এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি নিরূপণের বিষয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘‘তরুণদের কাজে লাগিয়ে চার স্তরে করণীয় পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে—ইনডোরে, আউটডোরে, ব্যক্তি পর্যায়ে ও প্রতিষ্ঠানে। ন্যাচারাল হ্যাজার্ড প্ল্যান ও প্রযুক্তিগত উদ্যোগের মাধ্যমে মানসিক প্রস্তুতি নিশ্চিত করা সম্ভব।’’ চুয়েটের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘‘মন্ত্রণালয়গুলো তাদের আওতাধীন স্থাপনাগুলোর মূল্যায়ন করবে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হবে।’’
সভায় এমআইএসটির অধ্যাপক মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘‘জনগণকে আতঙ্কিত হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের সম্পদের মধ্যে থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছানো জরুরি।’’ গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী জানান, সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভূমিকম্পের ফলে ফাটল ধরা ভবনের ছবি সংগ্রহ ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই’শটির বেশি ভবনের ফাটল চিহ্নিত হয়েছে, যা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়ক হবে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিশেষজ্ঞদের লিখিত সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার দ্রুত সময়ে টাস্কফোর্স গঠন করবে। এই টাস্কফোর্সে সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ এবং প্রাসঙ্গিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা যুক্ত থাকবেন। এছাড়া বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভূতত্ত্ববিদ ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সমন্বয় বৃদ্ধি করা হবে।
সিএ/এমআরএফ


