বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত। যাঁরা রাজনীতি করেন তাঁরাই রাজনীতির দায়িত্ব পালন করবেন—এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য কেউ এ জায়গায় এলে সেই উপলব্ধি থাকবে না।
রোববার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর ভাসানী ভবনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা সদ্য প্রয়াত সাইফুল ইসলাম পটুর আত্মার মাগফেরাত কামনায় আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আগে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রয়াত পটুর রাজনৈতিক সংগ্রাম, ব্যক্তিগত সততা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা স্মরণ করেন। এতে বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সরাফত আলী সপু, সহ–স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, যুব বিষয়ক সহ–সম্পাদক নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সাদরেজ জামানসহ পটুর সহযোদ্ধারা।
রিজভী বলেন, “মোগল আমলের কারওয়ান বাজারে নদী ছিল। এক সময় পাল তোলা নৌকা আসত। জাহাজ আসত। আমরা নদী রক্ষা করিনি। জায়গা দখল করেছি। গ্রামের জমি বিক্রি করে ঢাকায় এসে ফ্ল্যাট কিনছে—মানুষ অতিদ্রুত বড়লোক হতে চাইছে। সেই ধানক্ষেত, নদী, পুকুর আর রাখতে চাইছে না। টাকাকেই দেবতা ভাবছে। এ কারণেই আজ সামান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগেও আমরা কেঁপে উঠেছি।”
তিনি আরও বলেন, “যার যে কাজ, রাজনীতিবিদদের ওপর রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া উচিত। এখানে অন্য কেউ এলে সেই উপলব্ধিটা থাকবে না।”
বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, সমাজে আজ মূল্যায়ন হয় ভিন্নভাবে। “ঢাকায় খাল ছিল, নদী ছিল—সব বন্ধ হয়ে গেছে। ধোলাইখাল পুনঃখননের মাধ্যমে পানি পরিষ্কার রাখা যেত, কিন্তু তা হয়নি। ভূমিদস্যু আর কিছু নগর পরিকল্পনাকারীর কাছে খাল–বিল–পুকুর যেন শত্রু। এরা কেউ ভাবেনি—আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুস্থ পরিবেশ রাখতে হবে।”
তিনি বলেন, “এক দেড় কাঠা জায়গায় দশ তলা বাড়ি। শিশুরা ফ্ল্যাটে বন্দি জীবন–যাপন করছে। ইংল্যান্ড–আমেরিকায় তো জলাধার বন্ধ করে দেওয়া হয় না। ঢাকার জলাধারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে—এরা ভূমিদস্যু, আবার রাজনৈতিক নেতা হচ্ছে। সমাজের অধিপতি হচ্ছে। এদের অনেকে ম্যাট্রিকও পাস করেনি, অথচ ভূমি দখল করে এখন বড় ফার্মের মালিক।”
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, “বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ চাকরির জন্য ধর্ণা দেয়। সমাজ এমনভাবে বিভক্ত। শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি এগুলো করেছে। তা না হলে ঢাকা শহরে পঞ্চাশটির বেশি ক্যাসিনো থাকে?”
তিনি আরও বলেন, “যারা এসবের সঙ্গে জড়িত, তাদের আওয়ামী লীগ থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। তকী হত্যার অভিযোগ যার বিরুদ্ধে ছিল, সে শেষ পর্যন্ত এমপি ছিল। খারাপ মানুষদেরই প্রটেকশন দেওয়া হয়েছে। যার কারণে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে দশজন মানুষ মারা গেছে।”
রিজভী বলেন, “রাজউকের এলাকাতেও ৯৫ শতাংশ ভবন অনুমোদনহীন। বিল্ডিং কোড মানা হয় না। চোখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আমাদের উপলব্ধি করার সময় এসেছে—না হলে একটি শূন্যের গর্তে হারিয়ে যাব। বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।”
প্রয়াত সাইফুল ইসলাম পটুকে স্মরণ করে তিনি বলেন, “তিনি জীবিত অবস্থায় কী মূল্যায়ন পেয়েছেন? আমাদের আন্দোলন–সংগ্রামের অনেক নেতা–কর্মী রয়েছেন, যাদের রাজনৈতিক ও শিক্ষাগত ক্যারিয়ার উজ্জ্বল। তাদের মূল্যায়ন না হলে আমরা সচেতন নেতৃত্ব হারাব।”
সিএ/এমআরএফ


