অত্যাধুনিক মার্কিন যুদ্ধবিমান এফ–৩৫ নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য চুক্তিকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে ইসরায়েলের উদ্বেগ, চীনা প্রযুক্তি গুপ্তচরবৃত্তির শঙ্কা এবং আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন—সব মিলিয়ে চুক্তিটি এখন বড় রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়।
দীর্ঘ সাত বছর পর সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ওয়াশিংটন সফরের সময় অস্ত্রচুক্তি ও কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি সম্পন্ন হয়। এর মাধ্যমে ন্যাটের বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে সৌদির অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে। সৌদি আরব তাদের পুরোনো এফ–১৫ ও টাইফুনের পরিবর্তে ৪৮টি এফ–৩৫ হাতে পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আধুনিক এই স্টেলথ যুদ্ধবিমানের দাম ৮০ থেকে ১১০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে হতে পারে।
এফ–৩৫ নিয়ে ইসরায়েলের আপত্তি
এফ–৩৫ এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে শুধু ইসরায়েলকেই দেওয়া হয়েছিল। তাই সৌদির হাতে এই যুদ্ধবিমান গেলে ইসরায়েলের প্রযুক্তিগত ও সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইসরায়েল চাইছে—এফ–৩৫ সরবরাহের আগে রিয়াদকে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে যোগ দিতে হবে এবং রিয়াদ–তেল আবিবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হবে। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল বাধা দিলে চুক্তি দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকতে পারে।
ইরানকে ঘিরে শক্তির নতুন হিসাব
বিশেষজ্ঞদের দাবি, সৌদির কাছে এফ–৩৫ গেলে শুধু ইরান নয়, উপসাগরের অন্যান্য দেশগুলোর ওপরও আকাশসামরিক প্রাধান্য পাবে রিয়াদ। এই যুদ্ধবিমান ইরানি আকাশসীমায় নজর এড়িয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা রাখে। তবে ইরানের সস্তা কিন্তু ব্যাপক আক্রমণ সক্ষম ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র—এফ–৩৫–কে চাপে ফেলতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
ইসরায়েলের ‘গুণগত সামরিক প্রাধান্য’ বজায় রাখা
যুক্তরাষ্ট্রের আইনগত বাধ্যবাধকতা হলো—মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখা। তাই সৌদির জন্য যে এফ–৩৫ দেওয়া হবে তা ইসরায়েলের তুলনায় কম উন্নত সংস্করণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চীনা প্রযুক্তি ফাঁসের শঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক উদ্বেগ—সৌদি–চীন ঘনিষ্ঠতার কারণে উন্নত প্রযুক্তি লিক হওয়ার ঝুঁকি। তাই কংগ্রেস নির্দিষ্ট নিরাপত্তা শর্ত আরোপ করতে পারে, এমনকি নির্দিষ্ট ঘাঁটায় সীমাবদ্ধ মোতায়েনের বিধিনিষেধও থাকতে পারে।
শেষ পর্যন্ত কী হবে?
বিশ্লেষকদের মতে, চুক্তি হলেও বাস্তবায়ন কঠিন। মানবাধিকার ইস্যু, আঞ্চলিক রাজনীতি, ইসরায়েলের আপত্তি—সব মিলিয়ে সামনে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
সিএ/এমআরএফ


