রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হককে প্রথমে প্রেমের সম্পর্কের জালে ফেলে পরে ব্লাকমেইল করে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে চাইছিলেন জরেজুল ইসলাম ও তার প্রেমিকা শামীমা আক্তার ওরফে কোহিনুর। পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাকে ঢাকায় এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ ২৬ টুকরো করে নীল ড্রামে ভরে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। র্যাব বলছে, ব্লাকমেইল এবং টাকা আদায় করাই ছিল পুরো ঘটনার মূল উদ্দেশ্য।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন জানিয়েছেন, প্রায় এক মাস আগে শামীমা ব্যবসায়ী আশরাফুলের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সম্পর্কের আড়ালে অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে টাকা আদায়ের পরিকল্পনাও করেন দুইজন। পরিকল্পনা অনুযায়ী আশরাফুলকে ফাঁদে ফেলে ঢাকায় আনা হয়। তাদের নিয়মিত অডিও ও ভিডিও কলের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ তৈরি করা হয়।
১১ নভেম্বর রাতে জরেজুল তার বন্ধু আশরাফুলকে পাওনা টাকা দেওয়ার কথা বলে রংপুর থেকে ঢাকায় আনেন। পরদিন ঢাকার শনির আখড়ার নূরপুর এলাকায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাসা ভাড়া করে তারা। সেখানে শামীমার সঙ্গে দেখা হয় আশরাফুলের। পরিকল্পনা অনুযায়ী শামীমা মালটার শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাকে অচেতন করে দেন। বাইরে থেকে জরেজ অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন, যাতে পরবর্তীতে সে ভিডিও দেখিয়ে ব্লাকমেইল করা যায়।
১২ নভেম্বর দুপুরে আশরাফুল পুরোপুরি অচেতন হয়ে পড়লে জরেজ তার হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং মুখ স্কচটেপে আটকে দেয়। এরপর অতিরিক্ত ইয়াবা সেবনের ফলে উত্তেজিত হয়ে হাতুড়ি দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করলে আশরাফুল ঘটনাস্থলেই মারা যান। তার শ্বাসনালীও স্কচটেপে আটকে যায় বলে র্যাব জানিয়েছে।
লাশ গুম করার জন্য পরদিন সকালে জরেজ বাজার থেকে চাপাতি ও দুইটি ড্রাম কিনে আনে। লাশ ২৬ টুকরো করে ড্রামে ভরে তারা বাসায় রেখে দেয়। দুপুরে সিএনজি ভাড়া করে ড্রামগুলো নিয়ে বের হয় দুজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখে আতঙ্কিত হয়ে হাইকোর্টের পানির পাম্পের কাছে একটি বড় গাছের নিচে ড্রাম দুটি ফেলে রেখে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
১৩ নভেম্বর হাইকোর্ট এলাকায় ড্রাম দুটি থেকে অজ্ঞাত পুরুষের দেহের অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সিআইডি আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয় যে এটি নিখোঁজ ব্যবসায়ী আশরাফুলের লাশ। ওইদিনই নিহতের বোন বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তদন্তে নেমে র্যাব শামীমাকে কুমিল্লায় তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যে শনির আখড়ার নূরপুর এলাকা থেকে রক্তমাখা পোশাক, দড়ি, স্কচটেপসহ হত্যায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর শামীমা জানায়, চাঁদাবাজির মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সাফল্য পেলে জরেজ পেত ৭ লাখ এবং শামীমা পেত ৩ লাখ টাকা।
তবে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আরও কোনো কারণ ছিল কি না, তা জানতে মূল আসামি জরেজুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। র্যাব বলছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিডিওর মাধ্যমে ব্লাকমেইল করাই ছিল তাদের লক্ষ, কিন্তু নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের পর তারা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পালানোর চেষ্টা করে।
সিএ/এমআরএফ


