বাবরি মসজিদ ভাঙার ৩৩তম বার্ষিকীতে ভারতের রাজধানী দিল্লি ও এর আশপাশে ধারাবাহিকভাবে ছয়টি বড় ধরনের বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল—এমনই তথ্য উদঘাটন করেছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো, যা আসামি জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে উঠে এসেছে। তদন্তকারীরা বলছেন, পরিকল্পনায় যুক্ত সন্দেহভাজনদের মধ্যে একাধিক চিকিৎসকের উপস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং ওই ইউনিটকে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া সন্দেহ করা হচ্ছে।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী সেলটি কয়েক ধাপে হামলা পরিকল্পনা করেছিল। তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে ছিল—জইশ-ই-মোহাম্মদ ও আনসার গাজওয়াত-উল-হিন্দের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সেল গঠন, স্বয়ংক্রিয় বিস্ফোরক পদার্থ (আইইডি) বানানোর কাঁচামাল সংগ্রহ, বিষাক্ত রাসায়নিক দিয়ে আইইডি তৈরির চেষ্টা, সম্ভাব্য হামলাস্থল রেকি, বানানো বোমাগুলো সেলের নির্দিষ্ট সদস্যদের কাছে হস্তান্তর এবং সমন্বিতভাবে দিল্লির কয়েকটি এলাকায় একযোগে বিস্ফোরণ ঘটানো। তদন্তকারীরা বলছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা দিল্লি ও আশপাশের শহরগুলোর ৬–৭টি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটানোর উদ্যেশ্যে বিস্ফোরক এবং অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় করছিল।
সূত্রগুলো আরও বলেছে, এই সন্ত্রাসি কৌশলটি প্রথমে চলতি বছরের আগস্টেই চালু করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু বাস্তবায়ন না হলে নতুন একটি তারিখ ঠিক করা হয়। তখন তারা ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর—বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বার্ষিকী—লক্ষ্য করেছিল। তদন্তে উঠে এসেছে, বাবরি মসজিদ ভাঙা ঘটনাকে প্রতিশোধ নেয়ার উদ্দেশ্য উল্লেখ করে গ্রেপ্তাররা নিজস্ব স্বীকারোক্তিও করেছে।
ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যোগসাজশের তথ্য পাওয়া ঘটনা হিসেবে দিল্লির লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে একটি গাড়ি বিস্ফোরণের কথা তদন্তকারীরা উল্লেখ করেছেন। ওই বিস্ফোরণে অন্তত ৯ জন নিহত ও ২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন কাশ্মীরি চিকিৎসক ডঃ উমর মোহাম্মদ (উমর উন-নবী) — যিনি হাতের কাছে আতঙ্ক ও হতাশায় হয়তো ওই ঘটনা নিজেই ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে তদন্তকারীরা ধারণা করছেন। বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে ফরিদাবাদের একটি অভিযানে প্রায় ২ হাজার ৯০০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জাতীয় বিস্ফোরক পদার্থ জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে মুজাম্মিল শেখ ও শাহীন সাইদ নামে দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা বলছেন, গ্রেপ্তারের পর খতিয়ে দেখা হয়েছে যে এই চিকিৎসকরা উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবীদের নিয়ে গঠিত নতুন সন্ত্রাসী ইউনিটের সদস্য; তাদের লক্ষ্য ছিল শহরতলীতেও বড় ধরনের আঘাত করা। তবে সেল থেকে সহযোগীদের ধরা পড়া ও অভিযান তৎপরতার ফলে মূল কৌশল ব্যাহত হয় এবং পরবর্তী সময়ে ঘটানাকারী লাল কেল্লার কাছে ওই গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটান—এমনই একটি সম্ভাব্য চিত্র তদন্তে উঠে এসেছে।
পেছনের প্রেক্ষাপট হিসেবে বলা হয়ে থাকে—কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিল যে অযোধ্যার সেই স্থানটি রামের জন্মভূমি; ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর মসজিদ ধ্বংসের পর দীর্ঘ আদালত-আন্দোলনের শেষে সেখানে রামমন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে এবং এ বছর সেটি পূর্ণতা পেয়েছে। নানা বছর ধরেই জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ এই ঘটনার প্রতিশোধ নেবার হুমকি উচ্চারণ করে এসেছে—এমন প্রসঙ্গও তদন্তকারীরা তুলে ধরেছে।
তদন্তকারীরা এখন পর্যন্ত ওই সিরিজ পরিকল্পনার অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা, জব্দকৃত পদার্থের বিশ্লেষণ এবং আন্তর্জাতিক যোগসূত্র খতিয়ে দেখা নিয়ে কাজ করছে। এ ঘটনায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং আরও গ্রেপ্তার-অভিযান চালানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি
সিএ/এমআর


