মাত্র ১০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার মিথ্যা অভিযোগে ৩৯ বছর ধরে সমাজের লাঞ্ছনা, অপমান ও আদালতের হয়রানির শিকার হয়েছেন ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের রাজধানী রায়পুরের প্রবীণ নাগরিক জগেশ্বর প্রসাদ আওয়াধিয়া (৮৩)। জীবনের সায়াহ্নে এসে আদালতে নিজের নির্দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হলেও, তিনি এখন শুধু শান্তিতে মৃত্যুর কামনা করছেন।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জগেশ্বর প্রসাদ ছিলেন মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের বিলিং সহকারী। সৎ, পরিশ্রমী ও একনিষ্ঠ কর্মচারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৮৬ সালের এক ষড়যন্ত্র তার জীবন পুরোপুরি ওলটপালট করে দেয়।
ঘটনার সূত্রপাত ১৯৮৬ সালে, তখন জগেশ্বরের বয়স ছিল ৪৪ বছর। একই প্রতিষ্ঠানের কর্মী অশোক কুমার বর্মা নিজের বকেয়া বিল দ্রুত পরিশোধ করাতে চাপ দিতে থাকেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে বিল পরিশোধে অস্বীকৃতি জানালে অশোক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পনা করেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অশোক প্রথমে জগেশ্বরকে ২০ টাকা ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন, যা তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর ২৪ অক্টোবর জোর করে ১০০ টাকা তার হাতে গুঁজে দেন। ঠিক তখনই নজরদারি দলের কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই জগেশ্বরকে ‘ঘুষ নেওয়ার অপরাধে’ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেন।
এরপর শুরু হয় এক নিষ্ঠুর যাত্রা। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে অর্ধেক বেতনে কাজে ফিরতে হলেও পদোন্নতি, সুবিধা ও পেনশন সবই বন্ধ হয়ে যায়। সমাজে ‘ঘুষখোর’ তকমা লাগায় তিনি হয়ে পড়েন একঘরে। জীবনের শেষভাগে এসে সংসার চালাতে বাধ্য হন নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতে।
দীর্ঘ ৩৯ বছরের অবিরাম আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে আদালত সত্যকে স্বীকৃতি দেয়। বিচারক স্পষ্টভাবে রায়ে বলেন, জগেশ্বর প্রসাদ নির্দোষ; তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক।
তবে এই ন্যায়বিচার জগেশ্বরের জীবনে শান্তি আনলেও আনন্দ আনতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘এত বছর ধরে আদালতে ঘুরে বেড়িয়েছি। জীবনের সেরা সময় কেটে গেছে অপমানে। এখন শুধু শান্তিতে মরতে চাই।’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
সিএ/এমআরএফ


