যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া থেকে সমুদ্রপথে তেল কেনা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানিগুলো। বাণিজ্য-সম্পর্কিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে মস্কোর তেল রপ্তানি ও বৈদেশিক আয়ে বড় ধাক্কার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্স জানায়, ওয়াশিংটন রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানি—রসনেফট ও লুকঅয়েল—এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরই চীন এই সিদ্ধান্ত নেয়। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নতুন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
এদিকে রাশিয়া থেকে সমুদ্রপথে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করা দেশ ভারতও একই নিষেধাজ্ঞা মেনে রুশ তেল ক্রয় কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাশিয়ার দুই প্রধান ক্রেতা দেশ—চীন ও ভারতের আমদানি হ্রাস পেলে মস্কোর তেল রাজস্বে বড় আঘাত লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে বিকল্প জোগানের চাপের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে পারে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় চীনের রাষ্ট্রীয় চারটি তেল কোম্পানি—পেট্রোচায়না, সিনোপেক, সিএনওওসি ও ঝেনহুয়া অয়েল—অন্তত স্বল্পমেয়াদে রুশ তেল কেনাবেচা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা হয়নি।
চীন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৪ লাখ ব্যারেল রুশ তেল সমুদ্রপথে আমদানি করে। এই আমদানির বেশিরভাগই করে ছোট ও স্বাধীন রিফাইনারি কোম্পানিগুলো, যাদের “টি-পট” নামে ডাকা হয়। তবে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর ক্রয়ের পরিমাণ নিয়ে এখনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
ভরটেক্সা অ্যানালিটিকসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর রুশ তেল আমদানি দৈনিক গড়ে ২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেলের নিচে ছিল। অপরদিকে এনার্জি অ্যাসপেক্টস-এর হিসাবে এই পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ ব্যারেল।
রসনেফট ও লুকঅয়েল সাধারণত তাদের তেল চীনে সরাসরি না পাঠিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে। অন্যদিকে স্বাধীন রিফাইনারিগুলো নিষেধাজ্ঞার প্রভাব যাচাই করতে সাময়িকভাবে ক্রয় বন্ধ রাখলেও তারা রুশ তেল কেনা সম্পূর্ণ বন্ধ করবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া চীন পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ৯ লাখ ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করে, যা পুরোপুরি পেট্রোচায়না পেয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে চীন ও ভারত রুশ তেল থেকে মুখ ফিরিয়ে বিকল্প বাজারের দিকে ঝুঁকবে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার যেসব দেশের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, তাদের তেলের চাহিদা ও দাম উভয়ই বেড়ে যেতে পারে।
সিএ/এমআর


