একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কের মধ্যে এসে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এবার প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। বুধবার (২২ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে কোয়ালিশন অব বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের (কোবা) উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
জামায়াতের আমির বলেন, শুধু ১৯৭১ সালের ঘটনাই নয়, ১৯৪৭ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত জামায়াতের সিদ্ধান্ত বা কর্মকাণ্ডে কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকে, তাদের সবার কাছেই তিনি নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাচ্ছেন। তার ভাষায়, মানুষ যেমন ব্যক্তি জীবনে ভুল করতে পারে, তেমনি একটি সংগঠনও ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কোন সিদ্ধান্ত সঠিক বা ভুল—তা ইতিহাসই নির্ধারণ করবে। তিনি বলেন, “আজ যেটাকে ভুল বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতে সেটাই সঠিক বলে প্রমাণিত হতে পারে।”
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শনির্ভর সংগঠন, যেখানে মানবিক মূল্যবোধ ও আত্মসমালোচনার জায়গা আছে। তিনি উল্লেখ করেন, “আমাদের দ্বারা যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, আমি বিনাশর্তে ক্ষমা চেয়েছি। এতে কোনো লজ্জা নেই, কোনো পরাজয় নেই; বরং এটি দায়িত্ববোধের বহিঃপ্রকাশ।”
সভায় তিনি আরও বলেন, তার এই ক্ষমা প্রার্থনা কোনো রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং মানবিক বিবেচনা থেকে আসা এক আত্মস্বীকারোক্তি। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ভুল স্বীকার করাই সংশোধনের প্রথম ধাপ।”
এসময় জামায়াত আমির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, বিশেষ করে ‘পাবলিক রিপ্রেজেন্টেশন অ্যাক্ট (পিআর)’ সংশোধন ও রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে গণভোটের দাবি জানান। তিনি বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে নির্বাচনে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেই পারস্পরিক সমতার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। তিনি বলেন, “জামায়াত চায় প্রতিবেশীর সঙ্গে সমান মর্যাদায় সহযোগিতামূলক সম্পর্ক।”
সিএ/এমআর