আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান যদি পাকিস্তানে হামলা চালানো সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হন, তাহলে গত সপ্তাহান্তে কাতারের দোহায় স্বাক্ষরিত সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যেতে পারে—এমন কড়া সতর্কতা দিয়েছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ সোমবার একজন বিদেশি গণমাধ্যমকে বলেছেন, চুক্তির কার্যকারিতা সম্পূর্ণভাবে আফগান তালেবানের ওপর নির্ভরশীল।
দুই প্রতিবেশীর সীমান্তে এক সপ্তাহ ধরে চলা তীব্র সংঘর্ষ ও বহু হতাহতের পর দোহায় যুদ্ধবিরতি করা হয়। ওই চুক্তিতে প্রতিশ্রুতি ছিল, সীমান্ত লঙ্ঘন বন্ধ থাকবে এবং দুই পক্ষই একে অপরকে সহায়তা করবে না। কিন্তু পাকিস্তানের দাবি, আফগান ভূখণ্ড থেকে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ও তার মিত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নিয়মিতভাবেই পাকিস্তানে আকস্মিক হামলা চালাচ্ছে এবং তালেবান “মৌনভাবে” তাদের আশ্রয় দিচ্ছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ বলেন, যদি আফগানিস্তান থেকে কোনো হামলা বা অনুপ্রবেশ ঘটে, সেটি চুক্তি লঙ্ঘন হিসেবে ধরা হবে এবং পাকিস্তানও প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
পাকিস্তান অনুযায়ী, টিটিপি দীর্ঘদিন ধরে তাদের জন্য বড় নিরাপত্তা হুমকি। ৯ অক্টোবর আফগান রাজধানী কাবুলে টিটিপি নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদকে হত্যা লক্ষ্য করে পাকিস্তানি বিমান হামলার ঘটনা উত্তেজনা বাড়িয়েছে; এরপর সীমান্তপ্রান্তীয় তুলো-কথা ও গোলাবর্ষণ অব্যাহত থাকে। পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্র বলছে, চলতি বর্ষে সন্ত্রাসী হামলায় দেশের হয়ে নিহতের সংখ্যা কয়েকশ—যেখানে প্রায় ৩১১ জন সেনা সদস্যের মৃত্যুর তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
কাবুলের প্রতিক্রিয়া আসিফের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আফগান তালেবান সরকার বলেছে, তারা পাকিস্তানবিরোধী কোনো সংগঠনকে সমর্থন করে না এবং ইসলামাবাদের অভিযোগ বিভ্রান্তিকর। তালেবানের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ দোহা বৈঠকের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বলেছিলেন, দুই দেশই শত্রুতিমূলক পদক্ষেপে জড়াবেন না এবং সীমান্ত পেরিয়ে আক্রমণ চালাবেন না—এমন করণীয় চুক্তিতে আছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমানা জুড়ে অবস্থানরত বহুসংখ্যান সশস্ত্র উত্তেজনা, সীমান্তবর্তী সক্রিয় জঙ্গি কার্যক্রম ও দুই পক্ষে সামরিক পদক্ষেপের পুনরাবৃত্তি যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীলতা রক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তুরস্কের ইস্তান্বুলে দফা বৈঠক আগামী ২৫ অক্টোবর নির্ধারিত থাকায় সেখানে চুক্তি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং নিয়ে আরও সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। যদি তালেবান ঐ অঞ্চলগুলোতে সন্ত্রাস দমন বা প্রত্যাহার কার্যকরভাবে করতে না পারে, তাহলে দ্রুত নতুন সংঘর্ষ বাঁধার ঝুঁকি থাকবে বলে নিরাপত্তা সূত্রগুলো মনে করছে।
সিএ/এমআর