সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা শিথিল করে নতুন করে আবেদন করার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি—যারা ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন, তারা নানা সময়ের বঞ্চনা ও প্রতিকূলতার শিকার হয়েছেন। তাই তাদের জন্য বিশেষ সুযোগ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
১২ অক্টোবর রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে এই দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বক্তৃতা করেন শাপলা আক্তার, খালেদা ফেরদৌস, আবু সায়েম, মতিউর রহমান, আসমাউল হোসাইন ও আবুল বাশারসহ অন্যরা।
বক্তারা বলেন, “আমরা ১৯৯০-১৯৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছি। কিন্তু আমাদের প্রজন্মই সবচেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার। কোটা সংস্কারে বঞ্চিত হয়েছি, ৩২ বছর বয়সসীমায় বঞ্চিত হয়েছি, করোনার সময় তিন বছর পরীক্ষাবিহীন কেটেছে, আবার ব্যাকডেট সুবিধাও পেয়েছি আংশিকভাবে।”
তারা উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ব্যাকডেট সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হলেও কার্যকর ধরা হয় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে। এতে করে ৩৯ মাসের মধ্যে ৩০ মাসই প্রজ্ঞাপনের আগেই শেষ হয়ে যায়—যা ছিল পুরোপুরি করোনাকালীন সময়। ফলে হাজারো প্রার্থী সুযোগ না পেয়েই বয়সোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, করোনা-পরবর্তী প্রায় দেড় বছর ধরে দেশে অর্থনৈতিক মন্দা ও নতুন সার্কুলার না আসার কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও সংকুচিত হয়েছে। অন্যদিকে, রি-সার্কুলারেও পুরনো আবেদনকারীদের পুনরায় আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়নি।
বক্তারা আরও বলেন, “গত ১৬ বছরে চাকরিতে প্রশ্নফাঁস, সেশনজট, অনিয়ম, দলীয়করণ, নিয়োগ ও প্রক্সি বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতির কারণে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। একই দিনে ১৭ থেকে ২২টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় অনেক যোগ্য প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতেই পারেননি। অথচ প্রাইভেট সেক্টরেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।”
এ পরিস্থিতিতে তারা সরকারের প্রতি দাবি জানান—আগামী ২০২৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত তিন বছরের জন্য সকল সরকারি চাকরিতে ব্যাকডেট সুবিধা দিয়ে আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রজন্ম কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে এবং তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মত দেন তারা।
বক্তারা আরও জানান, “আমাদের দাবি কোনো সহানুভূতির নয়, এটি ন্যায্য অধিকার। রাষ্ট্র যদি সত্যিই দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে চায়, তবে বয়সসীমা শিথিলের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ দিতে হবে।”
সমাবেশে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, যদি দাবি পূরণ না হয়, তবে তারা ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।