দক্ষিণ এশিয়ায় নারীদের অন্যতম স্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া আবারও উদ্বেগের কেন্দ্রে এসেছে। বর্তমানে এ অঞ্চলে ২৫ কোটি ৯০ লাখের বেশি নারী ও কিশোরী রক্তাল্পতায় ভুগছেন। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দ্রুত কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা আরও ১ কোটি ৮০ লাখ বেড়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তাল্পতা একটি প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিৎসাযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও অপুষ্টি, আয়রনের ঘাটতি, সংক্রমণ, দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং গর্ভাবস্থা-সম্পর্কিত জটিলতা এর প্রধান কারণ। এটি শুধু একজন নারীর স্বাস্থ্য নয়, একটি জাতির সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের সঙ্গেও জড়িত।
বিশ্বে কম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুদের প্রায় ৪০ শতাংশই দক্ষিণ এশিয়ার। রক্তাল্পতা শিশুদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে তাদের মানসিক বিকাশ, শেখার দক্ষতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের সরকার প্রথমবারের মতো একসঙ্গে রক্তাল্পতা প্রতিরোধে উদ্যোগ নিয়েছে। গত ৯-১১ জুলাই শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় অনুষ্ঠিত হয় ‘পুষ্টিকর দক্ষিণ এশিয়া’ শীর্ষক সম্মেলন, যেখানে ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচও এবং সার্কের উদ্যোগে ১০০ জনেরও বেশি নীতিনির্ধারক, গবেষক ও উন্নয়নকর্মী অংশ নেন। সম্মেলনে আঞ্চলিক কাঠামো ও দেশভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি হয়, যা এই উপেক্ষিত সংকট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া অ্যানিমিয়া একাডেমিক অ্যালায়েন্স চালুর ঘোষণাও দেওয়া হয়।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী ড. হরিণী অমরাসুরিয়া বলেন, “শ্রীলঙ্কায় এখনো রক্তাল্পতা একটি জনস্বাস্থ্য সংকট। আমরা উচ্চহারের জেলাগুলোতে পুষ্টি কর্মসূচি জোরদার করেছি এবং ইউনিসেফসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি।”
সার্ক মহাসচিব মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার তরুণী ও মায়েরা কেবল ভবিষ্যতের জনশক্তি নয়, তারা এখনকার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। তাদের সুস্থতা কেবল নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি ভবিষ্যতের বিনিয়োগ।”
ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক পরিচালক সঞ্জয় উইজেসেকেরা বলেন, “যখন দক্ষিণ এশিয়ার অর্ধেক নারী ও কিশোরী রক্তাল্পতায় ভোগেন, তখন এটি প্রমাণ করে যে, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তাদের ব্যর্থ করছে। সরকারগুলোর এখন উচিত নেতৃত্ব গ্রহণ করে বিদ্যমান সমাধানগুলো দ্রুত বিস্তৃত করা।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর দুর্বলতা, সীমিত কর্মসূচি, ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে না পারা—এসবই এই সংকট মোকাবিলায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।