ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়িত কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরে মন্ত্রণালয়ের মূল কাজগুলো ছিল—আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, ডিজিটালাইজেশন, হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং প্রশাসনিক গতিশীলতা নিশ্চিত করা।
🔹 আইনি সংস্কার
-
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন: গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত, অভিযুক্তের অধিকার সুরক্ষা ও বিচার সম্প্রচারের বিধানসহ একাধিক নতুন ধারা সংযোজন।
-
বিচারপতি নিয়োগে নতুন অধ্যাদেশ: সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি নিয়োগের জন্য স্বতন্ত্র জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি।
-
দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনে পরিবর্তন: ডিজিটাল সাক্ষ্যগ্রহণ, সমন জারি অনলাইনকরণ ও গ্রেফতার-রিমান্ডে স্বচ্ছতা আনা।
-
নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সংশোধন: শিশু ধর্ষণের জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল ও তদন্ত ব্যর্থতায় তদন্তকারীর জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ।
-
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫: পূর্বের নিপীড়নমূলক ধারাসমূহ বাতিল করে নতুন আইনি কাঠামো তৈরি।
-
বিবাহ নিবন্ধন ও পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা সংশোধন: বৈষম্যহীন বিধান এবং অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ।
🔹 প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও ডিজিটালাইজেশন
-
জুডিশিয়াল সার্ভিসের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ: বিচার বিভাগীয় পদ সৃষ্টি ও পদায়ন সম্পূর্ণ সুপ্রিম কোর্টের আওতায় আনা।
-
তথ্য ও সেবা কেন্দ্র: আদালত প্রাঙ্গণে তথ্যসেবা চালু করে হয়রানি কমানো।
-
কেন্দ্রীয়ভাবে আদালতের কর্মচারী নিয়োগ: স্বচ্ছ নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন।
-
প্রসিকিউশন মনিটরিং সেল ও অনলাইন সাক্ষ্যগ্রহণ: গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর মনিটরিং এবং অনলাইনে সাক্ষ্যগ্রহণ ব্যবস্থা চালু।
-
অনলাইন বেইলবন্ড সফটওয়্যার: জামিনপ্রাপ্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে সফটওয়্যার প্রস্তুত।
🔹 হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার
-
জেলা কমিটির সুপারিশে ১৫,০০০টির বেশি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা ও ৭৫২টি ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার।
-
সাইবার আইনের আওতায় দায়ের হওয়া ৪০৮টি স্পিচ-অফেন্স মামলা বাতিল।
🔹 দৈনন্দিন কার্যক্রমে গতি
-
গত এক বছরে ১,২৮৩টি মন্ত্রী পর্যায়ের নথি নিষ্পত্তি (পূর্ববর্তী সরকারের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি)।
-
৩৯১টি আইনি মতামত, ১.৫৯ লক্ষাধিক ডকুমেন্ট সত্যায়ন এবং রেকর্ডসংখ্যক ১২টি অংশীজন সভা আয়োজন।
🔹 অতিরিক্ত দায়িত্ব ও নিয়োগ কার্যক্রম
-
গঠিত সংস্কার কমিশন, গুম তদন্ত কমিশন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সাচিবিক সহায়তা প্রদান।
-
ইতিহাসের সর্বোচ্চ—সারা দেশে ৪,৮৮৯ জন সরকারি আইন কর্মকর্তা ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে ২৭৪ জন অ্যাটর্নি নিয়োগ।
-
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও সুপ্রিম কোর্টে (আপিল ও হাইকোর্ট) যথাক্রমে বিচারক ও প্রসিকিউটর নিয়োগে সহায়তা।
উপসংহার:
আইন মন্ত্রণালয় এক বছরে আইনি কাঠামো সংস্কার, ডিজিটাল কার্যক্রম, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।