Sunday, April 27, 2025
29 C
Dhaka

হ্যালো ডিয়ার আইডিয়াল গার্ডিয়ানস!

হাসান ইনাম

সন্তান! সন্তান আপনাদের কাছে অমূল্য রতন। নবজাতক শিশু থেকে ধীরে ধীরে কোলে-কাঁখে করে বড় করেছেন সন্তানকে। কখনও অভাব বুঝতে দেননি। সাধ্যমত আবদার পূরণ করেছেন। আদর আর ভালোবাসা দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। আপনাদেরই সন্তান। আপনাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। পড়ালেখা করিয়েছেন। আলাদা প্রাইভেট-কোচিং। সংসারে টানাটানি চললেও নিয়ম করে চুকিয়েছেন সন্তানের টিউশন ফি। কোনও কিছুর কমতি রাখেননি। সেই সন্তান যখন কোনও পাবলিক এক্সামে অংশগ্রহণ করে তখন স্বভাবতই আপনি বাড়তি কিছু আশা করেন। অন্যদের তুলনায় আপনার সন্তান ভালো করবে। আপনার মুখ উজ্জ্বল করবে। এটা অমূলক নয়। এই চাওয়া আপনার অধিকার। আপনার সন্তান, আপনার অধিকার।

কিন্তু এই বাড়তি চাওয়াটা কী ঠিক? আপনার পাশের ডেস্কের জলিল সাহেবও তো সন্তানের পিছনে কষ্ট করছেন। লাঞ্চে খরচ কমিয়ে মেয়ের বই কিনছে। পাশের ফ্ল্যাটের লাভলি ভাবিও তো গত মাসের মার্কেট বাদ দিয়েছেন ছেলের জন্য। আপনার মতো কষ্ট তো তাঁরাও করছে। সবাই করছে। কেউ আপনার থেকেও বেশি করছে। তারাও সন্তানের দিকে তাকিয়ে বাড়তি স্বপ্ন দেখছে। আপনিও দেখছেন। সবাই যখন এগিয়ে যেতে চাচ্ছে। কেউ কেউ তো পিছিয়ে পড়বেই। পড়তেই হবে। নাকি?

সময়টা এখন প্রতিযোগিতার। পার্সোনাল লাইফ বলেন আর কর্পোরেট লাইফ বলেন। সবখানেই সবাই চাচ্ছে একজন আরেকজনের থেকে এগিয়ে যেতে। এক বিন্দু হলেও এগিয়ে থাকতে। এই সমস্যা আপনার একার না। সমস্যা সমাজের, রাষ্ট্রের। তাহলে আপনার কী করণীয় এখন? সন্তানকে আর চাপ দিবেন না? পড়তে বসতে বাধ্য করবেন না?
করবেন। সব করবেন। জাস্ট আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নটা বাদ দিবেন। আপনার সন্তান ভালো করবে এরকম একটা বিশ্বাস পুষে রাখেন। বারান্দার টবে আত্মবিশ্বাসের চারা বুনন করেন। তারপর পরিচর্যা করতে থাকেন। অপেক্ষায় থাকুন ফুল ফোটার। সুগন্ধি একটি ফুল। ভালো ফুল। কিন্তু এই ফুলটিই বিশ্বের এক নম্বর ফুল হবে এমন স্বপ্ন দেখা বাদ দিন।

আপনার ভাই ব্যাংকক থেকে নেকলেস পাঠিয়েছে। শ্বশুর বাড়ী থেকে দুই বিঘা জমি পেয়েছেন। এসব শো অফ করেন। সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার সন্তান অমুক কলেজে পড়ে এগুলো বলে শো অফ করার দরকার নেই। কলেজ হয়তো ফ্যাক্ট। কিন্তু সময় তো এখন প্রতিযোগিতার। আপনি খুব গর্ব করে বন্ধুর সামনে বললেন আপনার সন্তানের কলেজের কথা। আপনার বন্ধু মুচকি হেসে চলে গেলো। এই মুচকি হাসির মানে কী জানেন? আপনার বন্ধুর সন্তান ভালো কলেজে চান্স পায়নি। আজ বাসায় গিয়ে সন্তানকে নিকুচি করে বলবে ‘তোকে দিয়ে কিসসু হবে না’। তারপর ছেলেটা বা মেয়েটা ভাবতে থাকবে আসলেই তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। ভিতরে ভিতরে মরে যাবে। মৃতদেহ নিয়ে ঘুরতে থাকবে। এই ঠান্ডা মাথার খুনি কিন্তু আপনি। তাই একটু ভেবে চিন্তে।

লেখকঃ শিক্ষার্থী,
দারুননাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা

Hot this week

নীল শাড়ি রূপা আর এক হিমালয়ের হিমু

সেদিন হিমালয় থেকে হিমু এসেছিল। মো. মোস্তফা মুশফিক তালুকদার। মাথার উপর...

সিজিপিএ বনাম অভিজ্ঞতা — মাহফুজা সুলতানা

বন্ধু, তোমার সিজিপিএ আমায় ধার দিও। বিনিময়ে,আমার থেকে অভিজ্ঞতা নিও।...

‘দেবী’কথনঃ একটু খোলামেলাই!

জুবায়ের ইবনে কামাল আপনি কি দেবী সিনেমা নিয়ে আমার মতই...

শরৎকাল: কাশের দেশে যখন প্রকৃতি হাসে !

ইভান পাল || আজ কবিগুরুর একটা গান ভীষণ মনে পড়ছে--- "আজি...

মাওঃ সাদ সাহেবের যত ভ্রান্ত উক্তি

বেশ কিছুদিন যাবৎ মাওঃ সাদ সাহেবকে কেন্দ্র করে তাবলীগ...

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরপিএল: সম্ভাবনা ও গুরুত্ব

আরপিএল বর্তমান বিশ্বে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের জন্য প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি...

কালীগঞ্জে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে অভিভাবক সমাবেশ

গাজীপুরের কালীগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী ‘নরুন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে’ শিক্ষার মানোন্নয়নের...

দৈনিক যায়যায়দিনের ডিক্লারেশন ফিরে পেলেন শফিক রেহমান

দৈনিক যায়যায়দিনের ডিক্লারেশন ফিরে পেলেন বর্ষিয়ান সাংবাদিক শফিক রেহমান।...

বিয়ের কাজ সারলেন তালাত মাহমুদ রাফি

বিয়ে করেছেন সমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফি। সোমবার (১৭ মার্চ)...

যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের সাথে কথা বলবে ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আগামীকাল মঙ্গলবার রুশ...

সিআইডি প্রধান হলেন গাজী জসীম

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন...

দেশের মাটিতে পা রাখলেন হামজা চৌধুরী

অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। দেশের মাটিতে পা রাখলেন...

পিরোজপুরে শিশু ধর্ষণের অভিযোগে পিতা-পুত্র আটক

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে সপ্তম শ্রেণির এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে জোর করে...
spot_img

Related Articles

Popular Categories

spot_imgspot_img