সামিরা শাইবা অথৈঃ-
বহুকাল আগের কথা,মাদক বলতে মানুষ কিছু দ্রব্য কে বুঝত যা ভীষণ নেশার সৃষ্টি করে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থের ক্ষতি করে, সেইটা বহুকাল আগের কথা তা আগেই বলা হয়েছে।
বর্তমানে মানুষ কিংবা আরও সুন্দর করে বললে কিশোর – কিশোরীরা মাদক বলতে যা বোঝে তা হোল যেই দ্রব্য গ্রহনের ফলে নিজেকে অন্য দশ জন সাধারণ মানুষ থেকে ভিন্ন মনে হবে , যেই দ্রব্য গ্রহণ করলে নিজ চরিত্রে একটু সাহিত্যিক ভাব ফুটে উঠবে , যেই দ্রব্য গ্রহণ না করলে তার সমাজে তার চরিত্র কিংবা ইমেজ যাকে বলে তা ছোট হয়ে যাবে তাকেই মাদক দ্রব্য বলে। সংজ্ঞাটি শুনতে হাস্যকর মনে হলেই আজকালকার কিশোর – কিশোরীদের জন্য এটি একটি উপযুক্ত সংজ্ঞা হিসেবে পরিচিত হতে পারে।
মাদক একজাতীয় নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য যার পেছনে হতাশা , বেকারত্ব , অপর একজনের প্ররোচনা ইত্যাদি কারণ রয়েছে, কিন্তু বর্তমান সময়ে এই মাদকজাতীয় দ্রব্যের মর্যাদা এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যে কিশোর – কিশোরীরা এখন মাদক গ্রহণ না করলে তাদের মনে সঙ্কা জাগে যে তার অন্য দশজন সহপাঠী তাকে কতটাই না দলছাড়া ভাববে ।
ভাবতে খারাপ লাগলেও বর্তামান সমাজে মাদক এবং বিশেষ করে কিশোর – কিশোরীদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক এরকম একটা পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে ।
পাঠ্যপুস্তকের উল্লেখিত কারণ গুলো তো আছেই মাদকাসক্ত হওয়ার পেছনে বর্তমানে একজন মাদকাসক্ত কিশোর অপর একজন কে প্ররোচিত করে না বরং মাদকাসক্ত কিশোরদের কাছ থেকে চক্ষুলজ্জার দায়েই হোক বা তার ইমেজ কেই বড় করার জন্য হলেও তারা মাদক গ্রহণ শুরু করে ।
আর যেহেতু বইয়ের ভাষায় কিংবা মাদকের নিজ গুণেই হক সেই ব্যক্তিটি মাদকাসক্ত হয়ে পরে
মাদক গ্রহণের যেই কারণটি নিয়ে আজ কথা বলছি সেই কারন কোন পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখিত নেই এটি আজ নিত্যদিনের পরিচিত দৃশ্য বলেই এটি নিয়ে আজ এত আলোকপাত করা হচ্ছে।
এবার আসি চরিত্রের মধ্যে একটি অন্যরকম ভাব ফুটিয়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে।
আজ যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন কিশোর যদি পিছনে সুন্দর একটি প্রাকৃতিক পরিবেশের ছবি নিয়ে একটি ছবি তুলে মানুষের সামনে তুলে ধরে তাহলে সেটি তার বন্ধুরা যতোটা না পছন্দ করবে তার থেকে অনেক বেশি পছন্দ করবে সে যদি একটা সিগারেট মুখে দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে থাকার একটি ছবি তুলে ধরে।
ঘটনাটা সত্য আবার যদি কোন জনমেই কবি বা লেখক ছিল না , যে কিনা বাংলা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখতে গিয়েই হাপিয়ে উঠে সে যদি ঠিক পূর্বের ভঙ্গিতে সামনে একটি খাতা আর কলম নিয়ে আর অতিরিক্ত যুক্ত করতে চাইলে একটি চায়ের পেয়ালা রেখে একটি ছবি তুলে তার বন্ধুদের সামনে তুলে ধরে তাহলে তাকে দেখতে কবিগুরুর ভাতিজা বলতেও অনেকে দ্বিধা বোধ করে না।
বর্তমান কিশোর – কিশোরীদের জন্য যেন সিগারেটের ধোঁয়ায় একটি ভাবের জগত গরে ওঠে।
এবার মাদক প্রতিরোধ কর্মসূচীতে আসা যাক । মাদক শারীরিক ও মানসিক ভাবে নানা ক্ষতি সাধন করে, পারিবারিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করে ইত্যাদি বিষয়গুলো তুলে ধরে অনেকেই অনেক সেমিনার কিংবা এই জাতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।
কিন্তু তারা যেই বিষয় গুলো ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন সেইগুলো এই মাদকাসক্ত কিশোর – কিশোরীরাই সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর রুপে ৩ -৪ পাতা লিখে আসে।
ভাব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের ‘ভাব ও কাজ’ প্রবন্ধের কথা মনে আসে। তিনি যদি আজকের পরিস্থিতি দেখতেন তাহলে একটা কথা বলার সম্ভাবনা আসে “ ভাব পাগলা মানুষের ভাব আজ সিগারেটের ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় ঘুরপাক খেতে খেতে আকাশে উড়ে বেরায় “।