আরপিএল
বর্তমান বিশ্বে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনের জন্য প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি প্রাক-অর্জিত শিক্ষার স্বীকৃতি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এই প্রাক-অর্জিত শিক্ষা বা রিকগনিশন অব প্রায়র লার্নিং (RPL) এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার অভিজ্ঞতা, কাজের দক্ষতা বা অনানুষ্ঠানিকভাবে অর্জিত জ্ঞানকে স্বীকৃতি পেতে পারে, যা প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো শ্রমনির্ভর উন্নয়নশীল দেশে RPL একটি সম্ভাবনাময় পথ যা কর্মসংস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
RPL কী?
রিকগনিশন অব প্রায়র লার্নিং (RPL) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি যেকোনো প্রাতিষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক উপায়ে অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সনদপ্রাপ্ত হতে পারে। এটি তাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যারা দীর্ঘদিন ধরে কোনো একটি নির্দিষ্ট পেশায় কাজ করলেও প্রথাগত শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাবে স্বীকৃতি পান না।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে RPL-এর প্রয়োজনীয়তা
১. বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক শ্রমবাজার:
বাংলাদেশে শ্রমবাজারের একটি বিশাল অংশ এখনও অনানুষ্ঠানিক খাতে রয়েছে। নির্মাণ, হস্তশিল্প, পোশাকশিল্প, কৃষি কিংবা হোটেল-রেস্টুরেন্টে কর্মরত বহু ব্যক্তি কাজের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করলেও তাদের কাছে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সনদ নেই। RPL এই জনগোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে পারে।
২. দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি:
প্রবাসী কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দক্ষতার সনদ একটি বড় ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ কর্মী বিদেশে যান, কিন্তু তাদের অনেকেই প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ও সনদ না থাকার কারণে কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হন। RPL এর মাধ্যমে তাদের দক্ষতা স্বীকৃতি পেলে উচ্চ বেতনের সুযোগ তৈরি হবে।
৩. দারিদ্র্য হ্রাস ও সামাজিক মর্যাদা:
দক্ষতার স্বীকৃতি পেলে একজন কর্মীর আয় বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি সামাজিক মর্যাদাও বাড়বে। এটি দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি আত্মমর্যাদা উন্নয়নেও সহায়ক।
৪. শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প পথ:
অনেক ব্যক্তি পরিবারিক, আর্থিক বা সামাজিক কারণে প্রথাগত শিক্ষার সুযোগ পান না। তাদের জন্য RPL হতে পারে এক ধরনের বিকল্প শিক্ষা ও দক্ষতার স্বীকৃতির পথ।
বর্তমান উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা:
বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (NSDA) এবং টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেইনিং (TVET) এর আওতায় RPL কার্যক্রম চালু করেছে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এটি বিস্তৃত করা হচ্ছে।
তবে, সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন:
– নীতি সহায়তা ও কাঠামোগত উন্নয়ন;
– মূল্যায়নের মানদণ্ড নির্ধারণ;
– বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণ;
– জনসচেতনতা বৃদ্ধি; এবং
– আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে সমন্বয়।
শেষ কথা
বাংলাদেশের অর্থনীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে RPL একটি যুগান্তকারী ধারণা। এটি শুধু ব্যক্তি নয়, গোটা জাতির সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। তাই এখনই সময় RPL-কে একটি মূলধারার কৌশল হিসেবে বিবেচনা করে এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান ও সম্প্রসারণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের।
এম এ আখের (যুগ্মসচিব), পরিচালক (প্রশাসন), যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।