১.
আমার তো আর কাজ নাই। এ বাসে, আশেপাশে গাড়িতে যানজটে বসা চাকুরীজীবী, ব্যবসায়ী, স্টুডেন্ট, সামনের সিটের চিৎকার করে কাঁদা সেই বাচ্চাটার মা, হকার,বর্তমানে বসে থাকা ওই হেল্পার, সবাই অপেক্ষা করবে। ভেবো না মানবিক জিনিসও আছে এই সারিতে, ওইযে এম্বুলেন্সে মলিন বিছানায় অশ্রুহাতে ধরে রাখা প্রিয় হাতের মৃত্যু, হাহাকার, আবার ফায়ার সার্ভিসের ঘূর্ণায়মান রঙিন বাতির তীক্ষ্ণ চিৎকারের আড়ালে মৃত্যু আশংকা এসব। সবাই বসে থাকবে, অপেক্ষা করবে!
আরে! এগুলা কোন গুরুতর ব্যাপার হলো! বড় বড় অর্জনের জন্য তো এসব ছোটখাটো কোরবানি দিতেই হয়। ইতিহাসও তো তাই বলে,ব্রো। ইতিহাস পড়ো ম্যান, ইতিহাস! তখন আমিও একটা ড্যাব দিয়ে বলব কি আর করার!
ইয়ে আমি মানে আমার বিবেক। সেও এখন হাল ছেড়ে দিয়েছে। হয়তো সুবোধের মতো “হবে কি?” বলে পালিয়ে গেছে। কিন্তু এখন আবার বেশ আধুনিক হয়ে ফিরে এসেছে সে। আর আমিও একরাশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”কিরে,তোর এই অবস্থা ক্যান?” হাসিমুখে সে উত্তর দেয়,”ডিজিটাল বলে কথা!”
২.
বাসের পেছনের সিটে বসে আছি।গত পাঁচ মিনিটে আমাদের গাড়িটি একইঞ্চিও আগায় নি, ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। পাশের জানালাটা একটু মনে হয় নড়বড়ে, তাই গাড়ির কাঁপুনি তীক্ষ্ণ একটা আওয়াজ করছে, বিরক্তি তৈরী করার মত। বাইরে দেখলাম একটা খাম্বার উপরে টিভিস্ক্রিনে বাংলা ছায়াছবির এড চলছে। সিনেমার নাম ‘সোনাবন্ধু’। বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে ফিল্মের গুণাগুণ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। কিন্তু কতটা সাফল্য হয়েছে তা জানিনা। দেশ এখন ডিজিটাল হয়েছে, পদ্মাসেতু হচ্ছে, মেট্রোরেল হবে। কিন্তু যযানজট সেই একই জায়গায়! ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থাকাটা এখন বিলকুল অস্বস্তিকর নহে, আনন্দদায়ক করার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যমে। আহা! বুঝতে পাড়ছো না, ইহা তো ডিজিটাল বাংলাদেশের আরো একটি উজ্জল উদাহরণ।
গাড়িটা বন্ধ ছিল ওমনি বুনো ষাঁড়ের মত ঝাঁকুনি দেয়া শুরু করল। মনে মনে ভাবলাম,আহা!বোধ হয় এখনই মত্ত হয়ে ছোটাশুরু করবে। ওমা! এ দেখছি যে লাউ সেই কুদু! বিশ মিটার যেতে না যেতেই আবার সেই জলবৎ অবস্থা। জানিনা কবে ছাড়বে এ জ্যাম, অপেক্ষার প্রহর শেষ কখন হবে। সবাই আমার জন্য দোয়া করিও, যেন সহিসালামত ভাবে গন্তব্যে পৌছুতে পারি।
–শান্ত আহমেদ