মোশারফ হোসাইন :
একটি সুস্থ জাতি পেতে প্রয়োজন একজন শিক্ষিত মা, বলেছিলেন প্রখ্যাত মনিষী ও দার্শনিক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। অথচ আজ ২০১৮ এসেও বাংলাদেশের ৩০% মেয়ে এখনো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, যার প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ । আগামী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেড়ে উঠা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতেও বাল্য বিবাহ একটি বড় ধরনের বাধা ।
বাল্যবিবাহর ফলে মেয়েদের সম্মুখীন হতে হয় বিভিন্ন সমস্যার,শ্বশুর বাড়ির সম্পর্কে বুঝে উঠার আগেই সংসার এবং পরিবারের ভারে আক্রান্ত হয়, শুরু হয় অশান্তি, পারিবারিক কলহ, এবং সর্বোপরি পারিবারিক নির্যাতনও, বাল্য বিবাহের শিকার ছেলে ও মেয়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদনের মত মৌলিক মানবাধিকার লংঘিত হয়, যা তাঁকে তার সারাজীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ করে ও অন্যদিকে আইন এবং সংবিধানের লংঘন, অপরিনত বাড়ন্ত পুষ্ঠিহীন শরীরে বেরে উঠে আরেকটি অনাগত ভবিষ্যত অপুষ্ঠিগত অভিশাপের বোঝা, জন্ম দিবে কিছুদিন পর আরেকটি অপুষ্টিতে আক্রান্ত প্রজন্ম, বেড়ে চলে মা ও নবাগত শিশুর জীবনের ঝুঁকি ।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৮ বছরের আগে অসংখ্য মেয়ের বিয়ে হচ্ছে । মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে – মাত্র ৩-৪ হাজার টাকার দেনমোহরেও বিয়ে হচ্ছে এই সব সুবিধা বঞ্চিত, মেয়েদের যাদের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে – কোন দেন মোহরই ধার্য করা হয়নি এমনকি বিয়ের রেজিষ্ট্রেশনও করা হয়নি । কোন কোন ক্ষেত্রে বড় অংকের যৌতুক দাবী করছে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির পরিবার । ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ১০-১৮ বছর বয়সের দুই তৃতীয়াংশ কিশোরী বাল্য বিবাহের শিকার হয় । সেভ দ্যা চিলড্রেন এর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সব চেয়ে বেশী বাল্যবিবাহ’র প্রচলন ।
তবে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনটি বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রচার/প্রচারনা করা প্রয়োজন । রেডিও, টেলিভিশনে ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করন, গ্রাম অঞ্চলে উঠান বৈঠক ও মা সমাবেশ এক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হবে ৷ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনে প্রশাসনের সহায়তা কামনা , প্রতিটি ইউনিয়নে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা, নবম ও দশম শ্রেনীর পাঠ্য বইতে এ বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করা হলে বাল্যবিবাহ নিরোধ করণের সূফল পাওয়া যেতে পাড়ে ।