সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ছাত্রনেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদের বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার চারটি চেক উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গতকাল বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান পুলিশের উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি জানান, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর নাখালপাড়ার একটি ভাড়া বাসা থেকে চেকগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।
সাবেক এমপির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার অভিযোগ
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া চেকগুলো রংপুর-৬ আসনের সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের মালিকানাধীন ‘ট্রেড জোন’ নামক একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হয়েছে।
ট্রেড জোনের ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম জানান, মোট ৫ কোটি টাকার ১১টি চেক নেওয়া হয়েছিল ছয়জন ব্যক্তি মিলে, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। তবে এসব চেকের বিপরীতে টাকা উত্তোলন সম্ভব হয়নি, কারণ ব্যাংক হিসাবগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থ রাখা হয়নি।
সাইফুল ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি একটি জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। ধারণা করা হচ্ছে, এক মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে রাজ্জাকরা এ তথ্য জানতে পেরে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে চাঁদার দাবি জানান।
জোর করে চেক নেওয়ার অভিযোগ
সাইফুল ইসলাম বলেন, ২৬ জুন সন্ধ্যায় আবদুর রাজ্জাকসহ ছয়জন গ্রিন রোডের কার্যালয়ে ঢুকে সবার মোবাইল কেড়ে নেন। এরপর ভয়ভীতি ও হুমকির মাধ্যমে জোর করে চেক লিখিয়ে নেন এবং স্বাক্ষর নিতে বাধ্য করেন।
তিনি আরও জানান, “তারা বলেছিল নিচে শতাধিক লোক অপেক্ষায় আছে। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ছবি পাশে রেখে আমাদের মালিকের ছবি তোলে এবং অপমানজনক হুমকি দেয়।”
রাজনৈতিক পরিচয় ও গ্রেপ্তার
আবদুর রাজ্জাক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। অন্য আসামিদের মধ্যেও একই সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার নেতাকর্মীরা রয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর চারজনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ছাড়া অন্যান্য কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।
রাজ্জাকসহ পাঁচজনের মধ্যে চারজন বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন। এই মামলার বাদী শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর।
চাঁদাবাজির বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তদন্তে
ডিএমপির উপকমিশনার তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গুলশানে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা কলাবাগান থানায় করার প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ বলছে, উদ্ধার হওয়া চেকগুলোর মধ্যে দুটি ১ কোটি টাকা করে, একটি ১৫ লাখ এবং একটি ১০ লাখ টাকার। তবে চেকগুলোর গ্রহীতা ও তারিখের ঘর ফাঁকা ছিল।
এদিকে আবদুর রাজ্জাকের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাঁর পরিবার হঠাৎ একটি বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করেছে। পুলিশ বলছে, আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়া সত্ত্বেও এমন নির্মাণকাজ তাঁদের সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।