পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলাসান সাইদু। জাতীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ঘোষণায় তিনি জানান, অনুগত সেনারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে বিদ্রোহ দমন করেছেন।
এর আগে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পাস্কাল তিগ্রির নেতৃত্বে একদল বিদ্রোহী সেনা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারে ঘোষণা দেয়, তারা প্রেসিডেন্ট পাত্রিস তালোঁকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে এবং সংবিধান স্থগিত করেছে। একই সময়ে কোটোনুতে প্রেসিডেন্ট ভবনের কাছে গোলাগুলির খবর পাওয়া যায়। ফরাসি দূতাবাসও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শহরে সংঘর্ষের কথা নিশ্চিত করে।
ব্যাপক উত্তেজনার মধ্যে রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার কয়েকজন সাংবাদিককে জিম্মি করে রাখার অভিযোগ ওঠে। পরে প্রেসিডেন্টের এক উপদেষ্টা বিবিসিকে জানান, প্রেসিডেন্ট তালোঁ নিরাপদে আছেন এবং ফরাসি দূতাবাসে অবস্থান করছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলাসান সাইদু বলেন, “রবিবার ভোরে অল্পসংখ্যক সেনা রাষ্ট্র ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে বিদ্রোহের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীর অনুগত সদস্যরা শপথের প্রতি অবিচল থেকে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ করেন।” তিনি জনগণকে স্বাভাবিক দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
ঘটনার পর কোটোনুর আকাশে হেলিকপ্টার টহল এবং শহরের বিভিন্ন সড়কে সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি বাড়তে দেখা গেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ফরাসি ও রুশ দূতাবাস তাদের নাগরিকদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। মার্কিন দূতাবাস কোটোনুর প্রেসিডেন্ট ভবনসংলগ্ন এলাকা এড়িয়ে চলতে নির্দেশনা দিয়েছে।
অভ্যুত্থানকারী সেনারা প্রেসিডেন্ট তালোঁর শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করে এক বিবৃতিতে দাবি করে, তারা বেনিনের জনগণকে “ভ্রাতৃত্ব, ন্যায়বিচার ও অগ্রগতির নতুন যুগ” উপহার দিতে বিদ্রোহ শুরু করেছে।
৬৭ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট তালোঁ, যাকে পশ্চিমা বিশ্বের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়, আগামী বছর দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করে ক্ষমতা ছাড়ার কথা। এপ্রিল মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ‘তুলার রাজা’ হিসেবে পরিচিত তালোঁ তৃতীয়বার প্রার্থী না হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং অর্থমন্ত্রী রোমুয়ালদ ওয়াদাগনিকে উত্তরসূরি হিসেবে সমর্থন করেছেন।
অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য তালোঁ প্রশংসিত হলেও, ভিন্নমত দমনের অভিযোগে তার প্রশাসন সমালোচনার মুখে রয়েছে। অক্টোবরে নির্বাচন কমিশন পর্যাপ্ত সমর্থক না থাকার কারণ দেখিয়ে প্রধান বিরোধী প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে।
সম্প্রতি সংসদে সংবিধান সংশোধনী পাস হয়েছে, যার মাধ্যমে দ্বিতীয় কক্ষ ‘সিনেট’ গঠনের অনুমোদন এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে সাত বছর করা হয়। তবে রাষ্ট্রপতির দুই মেয়াদের সীমা বহাল রাখা হয়েছে।
ঘটনাটি এমন সময় ঘটল, যখন মাত্র এক সপ্তাহ আগে প্রতিবেশী গিনি-বিসাউয়ে প্রেসিডেন্ট উমারো সিসোকো এমবালোকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালি, নাইজার, গিনি ও বুরকিনা ফাসোসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিম আফ্রিকান দেশে অভ্যুত্থান পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
রাশিয়া এই অঞ্চলে প্রভাব বাড়িয়েছে এবং মালি, নাইজার ও বুরকিনা ফাসো ইকোবাস থেকে বের হয়ে ‘অ্যালায়েন্স অব সাহেল স্টেটস’ গঠন করেছে। রুশ সমর্থক কিছু সামাজিকমাধ্যম অ্যাকাউন্ট অভ্যুত্থানচেষ্টা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি মনিটরিং।
এদিকে ইসলামিক স্টেট ও আল-কায়েদা–সম্পৃক্ত জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর দক্ষিণমুখী বিস্তারের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেনিনেও চরমপন্থী তৎপরতা বেড়েছে।
সিএ/এএ


