মেঘ শব্দটা শুনলেই আমাদের চোখে ফকফকে সাদা, স্বর্গীয় পরির মত সুন্দরী এবং তুলার মত ঘন মত ছড়িয়ে থাকা কিছু বস্তু ভেসে উঠে, যার কথা চিন্তা করলেই মন ফুরফুরে হয়ে যায়, যা দেখলে খালি নাচতে মন চায়, মনের মধ্যে কবিতা ভেসে উঠে, তা-ই হল মেঘ।
এরকম মেঘের কদর বড্ড বেশি। নীলাকাশকে অন্যরকম নীল দেখাতে মেঘ যেন এক গয়নার ন্যায় কাজ করে, তার সাদা সাদা পাখা দিয়ে নিস্তেজ অভ্রকে জীবন্ত করে দেয়, তখন সেই রঙ্গিন নঃভে কার না তাকিয়ে দিন কাটাতে মন চায়? মনে হয় যেন স্বর্গে এসেছি!
কিন্তু আবার মেঘগুলো কেন জানি রাগ করে, গোমড়া হয়ে থাকে! কি জানি কেন, শুভ্র গগণের সাথে বোধহয় গাট্টি করে আমাদের উপর রাগ ঝাড়তে পারে। তখন এই মেঘ-মাসির দলেরাই সারা পৃথিবীকে কাঁদায়। তখন আমাদেরও মনে কেমন জানি লাগে। কি করব, আজ যে মাসি রাগ করেছে। কিন্তু কেন এমন করছে?
মেঘ-মাসিকে তখন মনে হয় যেন তাকে চিনলামই না কখন। সে যেন আর বন্ধু হতে চায় না। আসলে আমরা মাসিকে চিনিই না। মেঘ-মাসির যে কত বোন আছে তা আমরা জানিই না। তাইতো একেক সময়ে একেক মাসির সাথে অনেক সময় খাপ খাওয়াতে পারি না।
তবে ভাবনার কিছু নেই। আমাদের এই মেঘ-মাসিরা আসলে ৫টি ভিন্ন পরিবারের সদস্য। তাদের পরিয়ারের নাম হল- স্ট্র্যাটিরূপ, সিরিরূপ, স্ট্র্যাটো কিউমুলিরূপ, কিউমুলিরূপ, কিউমুলি নিম্বরূপ । এই ৫টি পরিবারে আবার কিছু সন্তান আছে। তারা আবার অন্য পরিবার থেকে ভিন্ন, তবে একই পরিবারের মধ্যে বোনের চেহারা অনেকটাই এক!
এবার তবে তাদের পরিচয় জানা যাক?
টিরূপ (Stratiform ) :
এই পরিবারের সদস্যরা খুব বেশি উচ্চতায় থাকে না। তারা সাধারণত বায়ুর ‘ট্রপমণ্ডলে’ নিম্ন, মধ্য ও উঁচু স্তরে ঘুরে বেড়ায়। এরা পরদে পরদে সুবিন্যস্ত থাকে। এই পরিবারে চার সদস্য রয়েছে-
- অলকাস্তর মেঘ (cirrostratus)

এরা ট্রপমণ্ডল এর উচ্চসীমায় অবস্থান করে (১৮০০০-৪৩০০০ ফুট উচ্চতায় এদের অবস্থান)। অনেক সময় সূর্য বা চাঁদের চারপাশে পরিবেষ্টিত যে ‘হ্যালো’ দেখা যায় সেটি এই মেঘের কারণে হয়। এই মেঘ আকাশে দেখা দিলে ঐ এলাকায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টি বা তুষারপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
- অল্টোস্ট্র্যাটাস (altostratus)

এই ধরনের মেঘের রং ঘোলাটে, ধূসর বা নীলচে-ধূসর হয়ে থাকে। এরা ট্রপমণ্ডল এর মধ্যবর্তী স্তরে অবস্থান করে (৭০০০-২৩০০০ ফুট)। এরূপ মেঘ একটানা বৃষ্টির আভাস দেয়; তাই এদের এক ধরনের বৃষ্টির মেঘ বলা যায়।
- স্তরমেঘ (Stratus)

এরা ভূপৃষ্ঠ হতে সবচেয়ে কাছে অবস্থান করে (০-৭০০০ ফুট)। এরা অনেক পাতলা এবং হালকা, যার ফলে এগুলো পাহাড়-পর্বতে ঘুরে বেরালে কুয়াশার মত দেখায়। অধিক পাতলা হওয়ায় এরা কোন বৃষ্টির সম্ভাবনা আনে না।
নিম্বোস্ট্র্যাটাস (nimbostratus)

সাধারণ বৃষ্টিপাতে আমরা এই মেঘ দেখি। এরূপ মেঘ অপেক্ষাকৃত ভাবে ঘন হয়। তবে বেশি ঘন হলে তা ঝড়ের মেঘ এবং আরও বেশি ঘন হলে তুষারপাতের মেঘে রূপ নিতে পারে।
সিরিরূপ (Cirriform)
এই পরিবারে শুধু মাত্র একজন সদস্য রয়েছে। তবে এই মাসি আমাদের দেশে থাকেন না। এই মাসির একটু ঠাণ্ডা ভাল লাগে তো, তাই যেখানে বরফ পড়ে, সেইখান দিয়ে তিনি ঘুরে বেরান। এই পরিবারের মাসির নাম-
- সিরাস (cirrus)

এরা উচ্চস্তরের মেঘ। আকাশের উচ্চতায় ১৬০০০-৪৫০০০ ফুট পর্যন্ত স্থানে এরা ঘুরে বেড়ায়। অন্য মেঘ যেমন পানির কণা দিয়ে তৈরি, এই মেঘ সৃষ্টি হয় বরফের কণা থেকে। এদের থেকে কখন তুষারপাত হয় না। প্রাকৃতিক বিভিন্ন ইন্দ্রি়গ্রাহ্য বিস্ময়ের ভূত অনেক সময় এই মেঘেই হয়। যেমনঃ ‘সারকাম হরাইজোন্টাল আর্ক’