দৈনন্দিন জীবনে এখন আবশ্যিক বিষয়ের একটি হলো কলম। সময়ের স্রোতে অন্যান্য জিনিসের সাথে পাল্লা দিয়ে আধুনিক হয়েছে কলমও। দিনে দিনে সবার হাতে ট্যাবলেট-স্মার্টফোন আসলেও ফুরোয়নি কলমের চাহিদা। কলমের প্রাচীন থেকে আধুনিক হবার গল্প নেট ঘেটে শোনাচ্ছেন মো: মুরাদ হোসেন।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি প্রয়োজনীয় বস্তু কলম।কলম ছাড়া এক মুহূর্ত ভাবা যায় না।এ কলম আবিষ্কারের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। আজ জানাবো কলম আবিষ্কারের ইতিহাস
প্রাচীন কলমের আবিষ্কার
আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে মিশরীয়রা প্রথম কলমের ব্যাবহার শুরু করেন তৎকালীন সময় কোন কাগজ ছিলনা। তারা লিখত গাছের পাতা শিকারকৃত পশুর চামড়া ও গাছের বাকলের উপর। কলম গুলো ছিল বাঁশের কঞ্চি; নলখাগড়া অথবা খন্ড ফাঁপা। এসব খন্ড কলমের মতো চিকন করে তা কালির মধ্যে চুবিয়ে তা দিয়ে লিখা হতো। কালি ছিল গাছের কষ অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান। কখনো আবার মানুষ প্রাণীর রক্ত কেও ব্যবহার করতো কালি হিসেবে। এরপর কিছুদিন মানুষ পাখির পালক কে কলম হিসেবে ব্যবহার শুরু করে।
চার হাজার বছর আগে গ্রীকরা লেখার জন্য হাতীর দাঁতকে ব্যবহার করতো কলম হিসেবে; যার নাম ছিল ‘স্টাইলস’।
কুইল কলম
রাজহাঁসের পালক দিয়ে তৈরি করা কলমকে কুইল বলে। ৭০০ খ্রীস্টাব্দে ব্যবহৃত হতো পাখির পালক। বসন্তের সময় মানুষ পাখির ডানার থেকে কিছু পালক তুলে রাখতো এ উদ্দেশ্যে। নিখুঁত ছবি আঁকার জন্য এর সঙ্গে ব্যবহৃত হতো কাকের পালক।পরে যোগ হয় পেঁচা ঈগল; রাজপাখি; টুরকি ইত্যাদি পাখির পালক। মধ্যযুগে পার্চমেন্ট বা চামড়ার কাগজের উপর কুইল দিয়া লেখা হতো। সমাজের অভিজাত লোকেরা শৌখিনতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করতো কুইল বা পালকের কলম।
কালির কলম
পূর্ব এশিয়ার লিপিবিদরা এ ধরনের কলম ব্যবহার করতেন। কলমের মূল দেহটি সাধারণত বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হতো। এ ছাড়া কখনো কখনো লাল চন্দন গাছ; কাঁচ হাতির দাঁত; সোনা; রূপা ইত্যাদি ব্যবহার করা হতো কলমের শীর্ষ অংশটি বিভিন্ন প্রাণীর পাখা ও লোম দিয়ে তৈরি করা হতো। এক সময় চীন ও জাপানের লোকেরা সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর চুল দিয়ে এ কলম তৈরি করতেন যা সারাজীবন স্মৃতি হিসেবে রাখা হতো ।
নিব কলম
কাঠের হাতলের সাথে একটি ধাতব নিব লাগিয়ে এ কলম তৈরি করা হতো। এ কলমে কালি জমা রাখার জন্য কালিদানি ছিলনা এবং লেখার সময় বারবার এটিকে কালির মধ্যে চুবিয়ে নিতে হতো। ঝর্ণাকলমের তুলনায় এ কলমের সুবিধা হলো- এ কলমে ঘন কালি ব্যবহার করা যায় যা ঝর্ণা কলমে জমে গিয়ে লিখার সময় সমস্যা দেখা দিতো অথবা মরিচা ধরে যেত। বর্তমানে নিব কলম ক্যালিগ্রাফি; অলংকরণ এবং কমিকস আঁকার জন্য ব্যবহার করা হয়।
আধুনিক কলম
আধুনিক কালের প্রথম কলম তৈরি হয় ইংল্যান্ডে ১৭৮০ সালের দিকে। এরপর,১৮৮৪ সালে ওয়াটারম্যানভ তৈরি করেন ফাউন্টেন কলম। যার নিব তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় ১৪ ক্যারেটের সোনা আর ডগা তৈরিতে লাগত ইরিডিয়াম । এরপর ইংল্যান্ড ছাড়া অন্যান্য দেশও ফাউন্টেন কলম তৈরি করা শুরু করে। আর বিংশ শতাব্দীতে তৈরি করা হয় বল পয়েন্ট পেন বা বলপেন। প্রথম আধুনিক বলপেন তৈরি করা হয় ১৯৮৮ সালের ৩০ অক্টোবর।। জন লাউড নামের এক হাঙ্গেরিয়ান প্রথম কলম আবিষ্কার ও কলম ব্যবহার করেন। তবে এ কলম তৈরি করতে তিনি তার ভাইয়ের ও সাহায্য নিয়েছেন যিনি ছিলেন একজন রসায়নবিদ।