মুরাদ আনসারী
” শোষকের ইমারত গড়তে নেতারা পাগল,
রং-বেরঙে বের হয়েছে ভোট শিকারের দল”
ইতিমধ্যে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনের আমেজ প্রতিটি চায়ের দোকান দখল করে নিয়েছে। চলছে চায়ের কাপে ভোট। সবাই নিজ দল জয়ী করার পিছনে দেখাচ্ছে হাজারো কারন। কে প্রধানমন্ত্রী হবে, কে মন্ত্রী হবে, কে এমপি হবে, কে কত ভোট পাবে, কোন আসন থেকে কত ভোট, কত ভোটে জয়ী হবে চায়ের দোকানে হিসাব হচ্ছে তা কড়ায়গন্ডায় নিয়মিত। চলছে এ নিয়ে নানা রকম বাক বিতণ্ডা উত্তেজিত শালিকের মত । প্রার্থীরাও পরিফেরা প্রানীর মত স্থিরভাবে বসে না থেকে ছুটে চলছে একঘর থেকে অন্য ঘর, এক চায়ের দোকান থেকে অন্য চায়ের দোকান, এক মহল্লা থেকে অন্য মহল্লা যেন চঞ্চল মৌমাছি। কেউ কেউ করছে নানা ওয়াদা – অঙ্গীকার।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়াই করবে প্রায় “সাড়ে আঠারো শত’’ প্রার্থী। এত প্রার্থীর ভীরে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করার জন্য কিছু পদ্ধতি জানা ছাড়া গত্যন্তর নেই। তাই আজ শেয়ার করবো কিভাবে হাজারো ভীরের মধ্য থেকে একজন যোগ্য প্রার্থী বাছাই করবেন–
১) শিক্ষাগত যোগ্যতা :
“বাংলাদেশের সংবিধানের” ৬৬ নং অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদের সদস্যতা লাভের জন্য বয়স সীমা নিদিষ্ট থাকলেও শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কোন বাধা প্রতিবন্ধকতা নেই। একটি শিক্ষিত জাতি গঠনের জন্য একজন শিক্ষিত নেতার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই প্রার্থী বাছাই করার আগে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিন। তবে শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি স্বশিক্ষিত হওয়াটা জরুরী।
২) মানবধর্মে বিশ্বাসী :
যারা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে দেশের মানুষকে ভালোবাসে তারাই হলো সঠিক মানুষ। এরা সর্ব প্রকার অমানুষিক কলুষতা থেকে মুক্ত, ধর্মতন্ত্রের খোলশ ভেঙ্গে মানবধর্মে বিশ্বাসী। ধর্মতন্ত্রী অমানবিকতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে।
৩) মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করার ক্ষমতা :
একটি আদর্শ নেতার অন্যতম গুনটি হচ্ছে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করার ক্ষমতা। একজন নেতার যে কোন পরিস্থিতিতে লক্ষ্য পূরনের জন্য নানা রকমের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু এমন পরিস্তিতে একজন যোগ্য নেতা কোন রকম বিশৃঙ্খলা বা বাজে মন্তব্য না করে ঠান্ডা মাথায় তা সমাধানের চেষ্টা করে।
৪) যুগোপযোগী চাহিদামূলক কাজের প্রতিশ্রুতি :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সিংহভাগ ভোটার হচ্ছে তরুন। তরুনরা ভোটের ফলাফল যে কোন সময় যে কোনো দিকে নিয়ে যেতে পারে এ বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। তাই তরুনদের আকাঙ্ক্ষা বুঝে তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা ( কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকার ভাতা, প্রযুক্তিগত সুবিধা) নিশ্চিত করন। নারীদের জন্য শ্রমসাপেক্ষ, প্রাতিষ্ঠানিক, স্বেচ্ছাপ্রমোদিত, গৃহনির্ভর অর্থনৈতিক কাজের সুযোগ করে দেওয়া। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, ধর্ষন, ইভটিজিং বন্ধ করা। প্রতিটি জায়গায় দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বৈষম্য রাজহানি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি কঠোর হস্তে দমন করা এবং সংবিধানের দেওয়া বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা
।
৬) নির্ভরযোগ্যতা:
জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে নির্ভরযোগ্যতা। বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক নেতার মাঝে এ গুনটির অভাব রয়েছে। সকালে এক কথা, বিকালে আরেক কথা কিংবা ওয়াদা দেওয়া কাজগুলো ঠিকমত রক্ষা করে না। তাই ভোট দেওয়ার আগে অবশ্যই চিন্তা করে দেখবেন ওয়াদা দেওয়া কাজগুলো সে সত্যি করবে কিনা।
৭) সৎ সাহস :
সব সময় সাহসী মনোভাব সবার কাছে গ্রহন যোগ্য নয়। তবে সত্যের পথে যে কোন দাবী অর্জনের জন্য রাজপথে থাকা গুনটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। একজন সাহসী নেতা কখনও দায়িত্বের চেয়ে ব্যক্তিগত আবেগকে প্রশয় দিবে না। কঠিন সিদ্বান্ত নেয়া একটি সাহসী ও আত্মবিশ্বাসপূর্ন কাজ। একজন সাহসী নেতা কঠিন সিদ্বান্ত নিতে গিয়ে কখনও দোটানায় পরে না। তাই ভোট দেওয়ার আগে প্রার্থীর মাঝে এই গুনটি আছে কিনা একটু দেখে নিবেন।
এছাড়াও বিশ্বাস অর্জন, দয়াশীলতা,বিচক্ষণতা, ক্ষমাশীলতা গুনগুলো একজন যোগ্য প্রার্থীর মধ্যে অবশ্যই থাকা জরুরী। দেশের উন্নয়নে এবং পরিবর্তনে একজন নেতা থেকে যোগ্য নেতার অবদান অনেক বেশি। তাই ভোট দেওয়ার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনি যাকে ভোট দিচ্ছেন। সে কি আসলেই যোগ্য প্রার্থী? নাকি না!