মাদকাসক্তি একটি সামাজিক ব্যাধি। মাদকসেবী নিজেকে ধ্বংস করার পাশাপাশি একটি পরিবার, সমাজ, পরিবেশকে ধ্বংশের দিকে নিয়ে যায়। সোনালি ভবিষ্যতকে অন্ধকার পথে এগিয়ে নিয়ে যায় মাদক। মাদকাসক্তির শেষ পরিনতি হল মৃত্যু। অনেক সময় এসব শিশু কিশোররা মাদক সেবনের জন্য টাকার সংকট দেখা দিলে সন্ত্রাসী, চুরি, পকেটমার, হাইজ্যাক, বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক কাজ করতে শুরু করে বলে অভিযোগ করে কিছু অভিভাবক। বর্তমানে শিশুরা বেশি মাদকে আসক্ত হচ্ছে। আমরা দেখি সিগারেটে গায়ে লেখা আছে ধূমপান মৃত্যু কারণ। যে সব শিশুর পিতা মাতা নেই তারা বেশি মাদক সেবনে আসক্ত হচ্ছে। মদ, গাজা, আফিম, পেথোড্রিন, হেরোইন, সীসা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন নামের মাদকের মরণনেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে এসব শিশু কিশোররা। “মাদক নেশায় অভ্যস্ত অনেক শিশু কিশোর-কিশোরীরা নিজের ঘনিষ্ঠজনের উপর আঘাত করতে পারে। “এর সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ ২০১৩ সালের ১৬ আগষ্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগে নিজ বাসায় পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে ঐশীর নিজে পিতা মাতার হত্যাকান্ড।” জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সূত্র মতে, ঢাকা বিভাগে মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে। মাদকাসক্ত ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলে এবং মেয়ে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সম্পতি বাংলাদেশ শিশু অধিকা ফোরামের তথ্য অনুসারে, পথশিশুদের মধ্যে ৮৫ ভাগ বিভিন্ন ভাবে মাদক গ্রহণ করে থাকে। ৪৪ শতাংশই ধূমপান, ২৮ শতাংশ ট্যাবলেট, ১৯ শতাংশ হেরোইন ও ৮ শতাংশ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে নেশা সেবন করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণা জরিপের মাধ্যমে জানা যায়, মাদকাসক্ত শিশুদের ড্রাগ গ্রহণ ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ৪৪ শতাংশ পথশিশু, পিকেটিংয়ে জড়িত ৩৫ শতাংশ, হাইজ্যাকের সঙ্গে ১২ শতাংশ, ট্রাফিকিংয়ে ১১ শতাংশ,আন্ডারগ্রাউন্ড সন্তাসীদের সোর্স হিসেবে পাঁচ শতাংশ ও অন্যান্য অপরাধে জড়িত ২১ শতাংশ, বোমাবাজির সঙ্গে জড়িত ১৬ শতাংশ পথশিশু। তামাক নিয়ন্ত্রন আইন ২০০৫ সংশোধন করা বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪ কোটি ১৩ লাখ বিভিন্ন মাধ্যমে তামাক ব্যবহার করছে। তামাকজাত দ্রব্য সেবনে প্রতিবছর আমাদের দেশে মারা যায় সাতান্ন হাজার মানুষ। তিন লাখ বিরাশি হাজার লোক পঙ্গু হয়ে যায় শুধুমাত্র এই মাদক গ্রহণের ফলে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংগঠন ড্রাগস ইনফরমেশন বলা হয়, ইয়াবা সেবনের ফলে রক্তনালী ছিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রনে আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল ১৯৯০ সালে কিন্তু অধ্যবধি চূড়ান্ত রূপ নেয়নি যদিও বিভিন্ন সংশোধনী আইন প্রনয়ণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির ছাত্র চ্যানেল আগামীকে বলেন, আমি প্রথমে শখের বশে সিগারেট খায়। ধীরে ধীরে শখই পরিণত হয় এক জীবন ধ্বংশকারী নেশায়। অামার পরিবার প্রথমে যানতনা পরে যেনেছে। এখন পরিবার অনেক বাধা দেয়। মাদক সেবনে ফলে আমার মাঝে মাঝে শরীল অসুস্থ থাকে। আমি এখন বাধ দেওয়া চেষ্টা করছি। ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া আরেক শিক্ষার্থী চ্যানেল আগামীকে বলেন, আমি প্রথম দিন যখন সিগারেট খায় তখন অনেক বমি করি। পরে ধীরে ধীরে সিগারেট খেতে শুরু করি। সিগারেট খায় বলে ঠৌট কালো হয়েছে যায় এবং মুখ দিয়ে দুরগঙ্গ বের হয়। সিগারেট খায় বলে আমার বাবা অনেক মেরেছে। এখন সিগারেট না খেলে মাথাই কাজ করে না। সিগারেট খায় বলে শাস নিতে কষ্ট হয়। আমি এখন বাধ দেওয়া চেষ্টা করছি। নাগরীপাড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক শাহিদুল ইসলাম চ্যানেল আগামীকে জানান, আমি সব শ্রেণি শিক্ষকদের বলেছি মাদকে কুফল সর্ম্পকে আলোচনা করতে। আমরা সমাবেশে মাদকাসক্তি নিয়ে বলি। সাধারণত শখের বশে সিগারেট খায় ছাত্র ছাত্রীরা কিন্তু এই মৃত্য কারণ। ছাত্র ছাত্রীদের বলি মাদকে সেবন করলে তাড়াতাড়ি মৃত্যু হতে পারে। আরো বলি রক্ত নষ্ট হয়ে যায়। এ বিষয়ে মনোবিদ রাউফুন নাহারের সঙ্গে চ্যানেল আগামীর কথা হয় । তিনি বলেন, একটি মানসিক রোগ। এছাড়াও মাদকাসক্তি ব্যক্তির মধ্যে অন্যান্য জটিল মানসিক রোগ বা সাইকোসিসও দেখা দিতে পারে। মাদকাসক্তি হবার পর একজন ব্যক্তির আচরন এবং জীবনযাপনে নেতিবাচক পরিবর্তন আসে। সে আর আগের মত কর্মক্ষম থাকে না। আক্রমণাত্মক এবং অপরাধপ্রবন হয়ে যায়। বর্তমানে শিশু-কিশোরদের মধ্যে মাদকাসক্তির হার অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। সাধারনত কোতুহলের বশবর্তী হয়ে এবং মাদকাসক্ত বন্ধু বা পরিচিতজনের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে শিশু-কিশোররা মাদকের পথে পা বাড়ায়। বাবা-মায়ের সন্তান লালন পালন পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ হলে সন্তানের জীবনে যেকোন সর্বনাশের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই মাদকাশক্তি প্রতিরোধে পরিবারের ভূমিকা মুখ্য। তিনি আরো বলেন, মাদকাসক্তি যেহেতু একটি মানসিক রোগ তাই অন্যান্য মানসিক রোগের মতই চিকিৎসা এবং কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে একজন মাদকাসক্তি ব্যক্তিকে সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব।
মাদকাসক্তি নিয়ে কথা হয় মাগুরা জেলা সরকারি শিক্ষা অফিসার কুমারেশ চন্দ্র গাছি বলেন, মাদকাসক্তি আমাদের নজরে আসেছে। তবে শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় শিশু আসক্ত হহচ্ছে । তাই আমরা মাসিক মিটিংনে মাদকাসক্তি নিয়ে প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা করব। শিশুরা মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকে সেই বিষয়ে শ্রেণি কর্ক্ষে ও সমাবেশে এর কুফল সর্ম্পকে বলে ও সে বিষয়ে সচেতন করব শিক্ষকদের। আসা করি আমরা সুফল পাব। এই বিষয়ে কথা হয় মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন হোসেন বলেন, মাদক সমাজের একটি ব্যাধি। এটা মানুষের জীবনি শক্ত হ্রাস করে দেয় এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে ব্রাহাত করে। আমরা সব জায়গায় চেষ্টা করছি আর যেখানে মিটিং কথা বলছি সে মাদকাশক্তি দিয়ে। মাদকের বিরুদ্ধ সুষ্ট ও সুন্দর সমাজ নির্মান জন্য কথা বলছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের জিরোটলালেজ নীতিতে কাজ করছি যেখানে মাদকের কথা শুনছি সেখানে মোবাইল কোট করছি। আর যারা বড় বড় ব্যবসা করে তাদের কে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে আর কোটে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। আর যারা ছোট ব্যবসাহি তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরণে অভিযান চালান হবে তাদের বিরুদ্ধে এবং জনো সচেতন মুলক যে দিক গুলো আছে আমরা সব জায়গায় সেচেতন করছি। স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রী যারা আছে তাদের যাতে মাদকের মরণ নেচা থেকে দূর থাকতে পারে সে জন্য বিভিন্ন স্কুলে মাদকের কথা বলা হচ্ছে। আমি মাদকশক্তি নিয়ে সব প্রধান শিক্ষকের সাথে মিটিং করে বলেছি। এরকম ছাত্র-ছাত্রী যদি থাকে সেখানে আমরা গিয়ে তার সাথে কথা বলব ও সচেতন করা চেষ্টা করব। মাদক থেকে যেত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুব সমাজকে রক্ষার জন্য যা যা প্রয়োজন তা আমরা করব।
মাদকাসক্তি সম্পর্কে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. সুমিত কুমার বিশ্বাস চ্যানেল আগামীকে বলেন, মাদক সেবন করলে শারীরিক মানোশিক অনেক ক্ষতি হয়। মাদকাশক্তি ফলে সবাই সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এমন কি পিতা মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করেন না। মাদকের প্রভাবে রোগী শারীরিক প্রতিক্রিয়াও হয়। তার মননশক্তি দুর্বল হতে থাকে। তার শরীর ভেঙ্গে পড়ে। এভাবে সে মারাত্নক পরিণতির দিক এগিয়ে যায়। মাদকের ফলে লিবার ও কিন্ডি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছারা শরীরের রক্ত কালো হয়েছে যেতে পারে।