শানিলা আহমেদ
বৃষ্টি শুরু হওয়ার পূর্বে, কিংবা বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর আমরা সকলেই মাটির একটি সুন্দর গন্ধ পাই। পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যিনি মাটির সেই মনোরম গন্ধ নিতে নিজেকে নিবারণ করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে সেই গন্ধ কি আসলেই মাটির গন্ধ? না, মাটির যেই কটু গন্ধ আমরা পাই আসলে তা মাটির গন্ধ নয়। ব্যাকটেরিয়া, গাছ এমনকি বজ্রপাতও ভুমিকা রাখতে পারে এই গন্ধটি তৈরি করতে। আর এই কমনীয় গন্ধটি পেট্রিকোর নামে পরিচিত।
প্রথমতঃ মাটিঃস্থ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা।
মাটিতে বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া বাস করে, তবে সব ব্যাকটেরিয়া এই গন্ধ তৈরি করতে পারে না। কিছু বিশেষ ব্যাকটেরিয়া, যারা অ্যাকটিনোব্যাকটেরিয়া‘স্ট্রেপটোমাইসেট্স’ নামে পরিচিত, একধরনের উৎসেচক নিঃসরণ করে যার নাম হল ‘জিওস্মিন’। এই জিওস্মিন এর গন্ধ হল মাটির গন্ধের মত। যখন স্ট্রেপটোমাইসেট্সরা জিওস্মিন নিঃসরণ করে এবং বৃষ্টির পানি যখন ভূপৃষ্ঠে আঘাত করে তখন পানি আর জিওস্মিন মিশে যায় এবং তা বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে যায়। যখন এই ঘ্রাণ আমাদের নাকের নস্ট্রিলে পৌছায় তখন আমরা মাটির গন্ধটি পাই।
দ্বিতীয়তঃ বজ্রপাত এর মাধ্যমে।
বজ্রপাত যখন অক্সিজেনের ( O2) অণুকে আঘাত করে তখন অণুগুলো একক পরমাণুতে ভেঙ্গে বায়ুমণ্ডলে ঘুরে বেরায়। এরপর এই একক পরমাণুগুলো অপর অক্সিজেন অণুর সাথে সংযুক্ত হয়ে ওজোন (O3) গ্যাস তৈরি করে এবং বায়ুচাপের ফলে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়ে আমাদের নাকে প্রবেশ করে। ফলে আমরা মাটির গন্ধটি পাই।
তৃতীয়তঃ গাছ-গাছালির মাধ্যমে।
অনেক সময় শুষ্ক মৌসুমে, কিংবা অনেক দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হলেও এই গন্ধটি পাওয়া যায়। সেটা আবার কিভাবে হয়? শুষ্ক মৌসুমে গাছপালা যখন পচে যায় তখন এর পরমাণুগুলো বাতাসের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে ধূলা অথবা পাথরের উপর পরলে ধূলা বা পাথরে জমে থাকা খনিজের সাথে বিক্রিয়া করে নতুন একটি জৈব তৈরি হয়। এই নতুন জৈবের উপর বৃষ্টির পানি পড়লে তা বাতাসের মাধ্যমে আবারো ঘুরে বেরায় এবং যখন তা আমাদের নাকের সংস্পর্শে আসে, তখন আমরা তা মাটির গন্ধ ভেবে মনের আনন্দে ঘ্রাণ নিতে থাকি।
আশা করছি এবার আর এই ঘ্রাণটিকে মাটির গন্ধ বলে চালিয়ে দিবেন না, বরং ভাবুন তো, প্রকৃতি আমাদের কি বলতে চাচ্ছে!