পুষ্পিতা প্রভা
ঘটনাটি প্রায় আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগের। আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিকে ঘিড়ে তখন নতুন সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো। সে সময় 370 সালে মিশরে হাইপেশিয়া নামের এক মেয়ের জন্ম।বাবার নাম থিওন, সেও বড় গনিতবিদ। তাঁর হাত ধরেই হাইপেশিয়ার জ্ঞান চর্চা করা। একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ বলতে যা বুঝায় হাইপেশিয়ার মাঝে তার পুরোটাই ছিলো। তিনি একাধারে গনিতবিদ, পদার্থ বিজ্ঞানি, জ্যোতিবিদ, নিউপ্লেটনিক। এছাড়াও বড় কথা তিনি আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির শেষ গবেষক, এবং তিনি ছিলেন ইতিহাসের শেষ প্যাগান সায়েন্টিস্ট। সেই সময় তিনি নারী হয়ে পুরুষদের সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলতেন। সমাজে তার একটি আলাদা অবস্থান ছিলো। হাইপেশিয়া নিয়মিত ভাবে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিতে বক্তৃতা দিতেন। অনেক দূর থেকে মানুষ তার বক্তৃতা শুনতে আসতেন। সে সময় খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার শুরু হয়েছিলো। তাদের ধর্মে জ্ঞানচর্চাকে ধর্মবিরোধী মতে করা হতো। যার কারনে হাইপেশিয়ার উপর তাদের অনেক ক্ষোভ ছিলো। কারণ হাইপেশিয়ার ধরনা মতে ধর্মগ্রন্থ হওয়া উচিত যুক্তি নির্ভর। তিনি এই বিষয়ে বক্তৃতাও দিয়েছিলেন। যার কারণে খ্রিস্টানরা আরো ক্ষেপে যায় এবং তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
৪১৭ সালে হাইপেশিয়া ঘোড়ায় করে কাজে যাচ্ছিলেন।পথে সকল ধর্মান্ধ মানুষেরা তাকে ঘিরে ধরে। তারা হাইপেশিয়াকে টেনে হিচড়ে বিবস্ত্র করে একটি গির্জায় নিয়ে যায়।এরপর তারা হাইপেশিয়ার দেহ থেকে মাংস খুলে নেয়, এবং শরীর টুকরো টুকরো করে তা আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। বলা হয়ে থাকে হাইপেশিয়া ছিলেন একটি আলোর শিখা যাকে ফু দিয়ে নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাও কিছু ধর্মান্ধ মানুষের কারণে হাইপেশিয়া মারা যাবার পর কেউ তাকে মনে রাখেনি। প্রায় তেরশো বছর পর ১৭২০ সালে ‘জন টোলান্ড’ হাইপেশিয়ার গল্প সকলের মাঝে তুলে ধরেন। হাইপেশিয়ার স্বরণেই চাঁদের একটি অংশের নাম রাখা হয়। তাঁর জীবনি নিয়ে ‘AGORA’ নামে একটি ছবিও আছে। হাইপেশিয়াকে পৃথিবী থেকে মুছে দিতে চাইলেও তা কেউ পারেনি। যতদিন দিন পৃথিবী আছে ততদিন হাইপেশিয়া মানুষের কাছে বেঁচে থাকবেন একটি আলোর শিখার মতো।