আনিস মিয়া :-
প্রযুক্তির একদিকে আশীর্বাদ, অন্যদিক দিয়ে যেন অভিশাপ”
“মোবাইল ফোন ” তথ্য প্রযুক্তি এ যুগে মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে বেশি ব্যবহিত একটি যোগাযোগ নির্ভর প্রযুক্তি। যা মাইলফলক পরিবর্তন এনেছে আমাদের তথ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশে মোবাইল-গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১০০কোটি ছাড়িয়েছে যাদের মধ্য অধেকের বেশি তরুণ -তরুণী এবং এর সঙ্গে-সঙ্গেই সমগ্র দেশে কাজ করে চলা মোবাইল টাওয়ারের সংখ্যাও ৫লক্ষেরও বেশি বলে জানা গিয়েছে।
বর্তমানে সিমলেস-কানেকটিভিটির দুনিয়ায় বিভিন্ন টেলি-যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলির মধ্যে মোবাইল-প্রযুক্তির ব্যবহারই সবচাইতে বেশি যার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় বিকিরণ।
গত ৪ঠা এপ্রিল, ২০১৭ তারিখে মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রায় দিয়েছেন যে, গোয়ালিয়র-নিবাসী জনৈক শ্রী হরিশচন্দ্র তিওয়ারির বাসভবনের নিকটস্থ মোবাইল টাওয়ারটিকে অবিলম্বে স্থানান্তরিত করতে হবে। মামলাকারীর বক্তব্য ছিল যে, উক্ত টাওয়ারটির থেকে নিঃসৃত বিকিরণের কারণেই তিনি হজকিন’স লিম্ফোমা নামক একটি বিরল ও দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
২০১১ সালের ৩১শে মে প্রকাশিত, বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার শাখা সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার’ তাদের রিপোর্টে জানায় – মোবাইল-টাওয়ার বিকিরণকে সম্ভাব্য কারসিনোজেন বা ক্যান্সার-সৃষ্টিকারীরূপে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
এছাড়াও বিজ্ঞানীদের বক্তব্য অনুযায়ী , মোবাইল-টাওয়ার বিকিরণের প্রভাবে – ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে, বিস্মৃতি দেখা দিতে পারে, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন থেকে স্নায়বিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
১৯৯৫ এবং ২০০৫ সালের দুটি গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে – এক্সরশ্মির প্রভাবে কেমন করে মানব ডিএনএ-গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, একই প্রভাব মোবাইল-টাওয়ার নিঃসৃত উচ্চ কম্পাংকের তরঙ্গ-সমূহের ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হবে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে মানব-শরীরে অত্যন্ত ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা দিতে পারে।
বর্ণ, গন্ধ, শব্দহীন এবং অদৃশ্য মোবাইল
টাওয়ারের রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয় নির্গত
বিকিরণ মানব দেহ ও জীব জগতের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর।
বিশেষজ্ঞদের মতে , শিশুদের
থেকে কমপক্ষে ৫ ফুট দূরে মোবাইল রাখতে উচিৎ।
কারন শিশুরা সবচেয়ে বেশি আকার্ন্ত হয় মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তায় ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের বৈশ্বিক পুষ্টি প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২২ শতাংশ নবজাতক কম ওজন নিয়ে জন্ম নিচ্ছে। দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি পাঁচ শিশুর দু’টি খর্বাকৃতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইলের রেডিয়েশনের ফলে দেশের অগণিত শিশু নানা মানসিক প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে আবাসিক এলাকা থেকে দূরে লোকালয়ের বাইরে কমপক্ষে ৪০ তলা ভবন সমান
উঁচুতে মোবাইলের টাওয়ার স্থাপন করতে হবে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে আবাসিক এলাকা, স্কুল,
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে অনেক
দূরে এবং অনেক উঁচুতে মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করা হলেও আমাদের দেশে এর চিএ উল্টো বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের
৯০ শতাংশ টাওয়ার লোকালয়,
বাড়ি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে স্থাপন
করা হচ্ছে । যা অতি দূত ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়াতে পারে।
সম্প্রতি আইআইটি বম্বের অধ্যাপক শ্রী গিরীশ কুমার তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন যে
ওরলী, মুম্বাইতে ঊষাকিরণ আবাসনের ষষ্ঠ থেকে দশম তল অবধি আবাসিকদের ভিতরে গত কিছু বছরে ক্যান্সার-আক্রান্তের সংখ্যা ধারাবাহিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। যার কারণ-স্বরূপ তিনি দেখিয়েছেন যে, ঊষাকিরণ আবাসনের ঠিক উলটো-দিককার আরেকটি আবাসনের মাথায় বসানো মোবাইল-টাওয়ারের মোট বিকিরণের সিংহভাগটুকুই নির্দিষ্ট-ভাবে পূর্বোক্ত আবাসনের ষষ্ঠ থেকে দশম তলাকেই প্রভাবিত করে চলেছে।
যত্রতত্র নির্মিত এই মোবাইল টাওয়ারগুলি থাকে নির্গত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সী (RF) তড়িত চুম্বকীয় বিকিরণের মাধ্যমে (electromagnetic radiation, EMR) 2 থেকে 2.5 মাইল সহজে পৌঁছে যায়। এর মাত্রা অনেকটাই মাইক্রোওয়েভের বিকিরণের মাত্রার মতো। ফলতঃ এই অল্প শক্তির বিকিরণ সেল টিসু (cell tissue) ও DNA-এর পরিবর্তন ঘটায় এবং ব্রেন টিউমার, ক্যান্সার, গর্ভপাত, অ্যালজাইমার সূচিত করতে পারে। শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। দেখা গেছে শিশুরাই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় কারণ তাদের করোটি পাতলা ও বেড়ে ওঠার সময় বলে তাদের কোষ বেশী সক্রিয়। যদিও বয়স্ক মানুষরা ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। UK-র ডাক্তার বাবুরা তো নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন যে ১৬ বছরের কমবয়েসী ছেলেমেয়েরা যেন মোবাইল ফোন ব্যবহার না করে, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সী (RF) থেকে যতোটা সম্ভব দূরে থাকা যায়।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে ঠিক কতখানি ওই মুঠোফোনটির প্রতি নির্ভরশীল তা নিশ্চয়ই আর নতুন করে বলবার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু অধিক মাত্রায় প্রযুক্তি ব্যবহার ও যেখানে সেখানে নিয়ম না মেনে যত্রতত্র ভাবে গড়ে উঠা মোবাইল টাওয়ার গুলো জনস্বাস্থ্য ও শিশুদের উপরে কতটুকু স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিস্তার করছে সেটা জানা জরুরি।