ছোট ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা আমাদের শরীরে নীরবে প্রবেশ করছে—রক্ত, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, এমনকি হাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। এগুলো খাদ্য, পানি ও বাতাসের মাধ্যমে আমাদের দেহে ঢুকে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণা সতর্ক করে।
৫ মিলিমিটার থেকে ছোট এই প্লাস্টিক কণাগুলো চোখে প্রায় দেখা যায় না, তাই আমরা সচেতন নই যে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫২,০০০টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা আমরা গ্রহণ করছি। লন্ডনের একটি ঐতিহাসিক কৃষি গবেষণাগারে পাওয়া নমুনা বিশ্লেষণে প্রথমবারের মতো ধরা পড়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব।
২০২৫ সালে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে চালানো প্রথম ‘প্লাস্টিক চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল’-এ দেখা গেছে, আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারে যেমন প্লাস্টিকের প্যাকেট থেকে পানি বা খাবার গরম করার সময় শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশের সম্ভাবনা বেশি। এই কণা দেহে জমে প্রদাহ ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের ক্ষতি করতে পারে বলে ধারণা।
গবেষণায় দেখা গেছে—হাড় ও পেশিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক কোষের বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে, হৃদযন্ত্রে ক্ষতি করতে পারে এবং ডিমেনশিয়া আক্রান্তদের মস্তিষ্কে বেশি মাত্রায় মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকে। যদিও সরাসরি রোগ সৃষ্টির কারণ এখনও স্পষ্ট নয়, তবে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি ও রোগের ঝুঁকি বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে।
বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা বিশেষত বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। ক্যানসার রোগীদের ওষুধের কার্যকারিতা কমতে পারে, এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগীদের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক আক্রমণ বাড়াতে পারে বলে গবেষণা চলছে।
গবেষকরা প্লাস্টিক উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গে কাজ করে নিরাপদ বিকল্প খুঁজছেন, তবে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট নিরাপদ মাত্রা নির্ধারণ হয়নি। তাই মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় খুঁজে বের করাটাই এখন প্রয়োজন।