ইশতিয়াক আহমেদ
প্রথমবারের মত মানব মস্তিস্কের সফল ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন হয়েছে। চীনের হারবিন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার জিয়াওপিং রেন ১৮ ঘণ্টা যাবত প্রায় ১৫০ জন সহযোগী ডাক্তার এবং নার্সের সহযোগে এই অপারেশনটি সম্পন্ন করেন। প্রথমবারের এই হেড ট্রান্সপ্লান্টে প্রধান কুশলী ও দিকনির্দেশক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইতালির তুরিনো অ্যাডভান্সড নিউরোমডুলেশন গ্রুপের বিখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক সার্জিও ক্যানাভেরো। যিনি গত পরশু ভিয়েনাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এই বছরের শেষ নাগাদে হেড ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশনের কথা উল্লেখ থাকলেও তা কোথায় হবে বা নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ ছিল না। তবে পশ্চিমা দেশ ছেঁড়ে চিনে এই ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশনের প্রধান কারন পশ্চিমা জম্বি ভীতি ও মৌলবাদিত্ব। বর্তমান মার্কিন সরকার এমন ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশনের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে। অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশের জনগণ “এটি ঈশ্বরের বিপক্ষে” বলে মত দেওয়ায় তা ইউরোপেও সম্ভব ছিল না! তবে চীন সরকার এই ক্ষেত্রে সাহায্য করায় এবং চিনে অরগ্যান ডোনারের সংখ্যা বেশি থাকায় প্রফেসর জিয়াওপিং ও প্রফেসর ক্যানাভেরো চীনেই ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশনের সিদ্ধান্ত নেন!
অধ্যাপক সার্জিও ক্যানাভেরো জানান, একজন ব্রেইন ডেড মানুষের ধর ও একজন পঙ্গু মানুষের মস্তিষ্ক ব্যাবহার করে এই ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশনটি করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে কম্পিউটার স্যিমূলেশন ও জটিল প্রোগ্রাম ব্যাবহার করে আগে থেকেই কিভাবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে তা জানা ছিল। সূক্ষ্ম ডায়মন্ড স্কালপ্যেল ব্যাবহার করে দুই শরীরের মস্তিষ্ক ও ধর আলাদা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে অত্যান্ত সতর্কতার সাথে রক্ত শিরা-ধমনী, স্পাইনাল কর্ড সহ শ্বাসপ্রশ্বাস নালি ও অন্ননালী সংযুক্ত করা হয়েছে। অপারেশন পরবর্তী কম্পিউটার স্যিমূলেশনে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ।তবে এটির সফলতা মুলত নিরভর করছে স্পাইনাল কর্ডের সঠিক সংযুক্তির উপরে।

পূর্বে রাশিয়ান ৩০ বছর বয়স্ক নাগরিক ভ্যালারে স্পিরিদিনভের মস্তিষ্ক অন্য দেহে পুনস্থাপনের কথা থাকলেও পরবর্তীতে তিনি তার অস্বীকৃতি জানান। এতে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকায় পরবর্তীতে তিনি নাম প্রত্যাহার করে জানান যে তিনি স্বাভাবিক ভাবে পক্ষঘাত অবস্থাতেই মারা যেতে চান । ডাক্তার জিয়াওপিং রেন পূর্বে বানরের দেহে মানব মস্তিষ্ক স্থাপন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন। তবে কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির দুই জীব হওয়ায় মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের সঠিক সংযুক্তির অভাবে মাত্র ২০ ঘণ্টা পরেই এই মানব-বানর হাইব্রিডটি মারা যায়! অবশ্য তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ একটি ইঁদুরের দেহে আরেকটি ইঁদুরের মাথা ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট সফলভাবে সম্ভব করেন, যা সুস্থভাবেই বেঁচে আছেন। তবে এই ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট মানব ইতিহাসে নতুন কিছু না । আজ থেকে ৪৫ বছর আগেও দুইটি বানরের ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশন করা হয় । যা প্রায় ৮ দিন বেঁচে ছিল। পড়ে জিবানুর সংক্রমণে বানরটিকে বাচানো যায় নি । তবে ৪৫ বছরে চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি অনেকটায় এগিয়েছে!
তবে চীনের এই ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশনে ভুক্তভুগি মস্তিস্কের এখনো জ্ঞান না ফেরায় পশ্চিমা বিশ্বে তুমুল ঝড় বয়ে যাচ্ছে। যদিও দেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া স্থিতিশীল আছে। কিন্ত্য এখনো জ্ঞান না ফেরায় তা কতটা সফল বলা যাচ্ছে না। ইঁদুরের সফল ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশনের জন্য ডাক্তার জিয়াওপিং বেশ আশাবাদী। আর তিনি সফল হলে মানবজাতির অমরত্বের ভিত্তি স্থাপিত হবে। আর এটি আশা দেখাচ্ছে পক্ষঘাতগ্রস্থ, পঙ্গু মানুষদের, যারা সারাজীবনের গ্লানি ভুলে নতুন ভাবে বাচতে চান। তবে মস্তিষ্কে জটিলতা বা নিউরো সেল ড্যামেজের ক্ষেত্রে এই ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশন প্রযোজ্য নয়। তাই স্টিফেন হকিং এর মত মটর নিউরন ডিসিজের ভুক্তভুগিদের জন্য স্টেম সেল ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশনের কথা ভাবছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা!
হেড ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশন মানুষের মহাকাশ যাত্রার জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। কারন পদার্থবিদ্যার নীতি অনুযায়ী এক জীবনে আন্তঃনাক্ষত্রিক যাত্রা প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া মরনহীন সাইব্রোগ বা অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক রোবটও তৈরি করতে এই ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশন প্রধান ভুমিকা রাখবে। তবে ধর্মীয় কুসংস্কারের বিপরীতে এই হেড ট্র্যান্সপ্ল্যান্টেশন কিভাবে সর্বমহলে স্বীকৃতি পাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যায়!
সূত্রঃ দা গার্ডিয়ান